• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সচল হয়নি শেরপুর জেলা কারাগার, ফেরেননি বন্দীরাও


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ০৬:১৭ পিএম
সচল হয়নি শেরপুর জেলা কারাগার, ফেরেননি বন্দীরাও

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে শেরপুর জেলা কারাগারে। এ সময় পালিয়ে যায় সব বন্দী। তারপর থেকে শেরপুর জেলা কারাগার সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। হামলা-ভাঙচুরের দুই সপ্তাহ পেরিয়েও গেলেও তা সচলে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো পদক্ষেপ। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দীরা মুক্ত অবস্থায় থাকায় জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পরপরই ৫ আগস্ট বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জেলা শহরের দমদমা কালীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত কারাগারের সামনে জড়ো হন। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগার ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল কারারক্ষী। ওই অবস্থায় বিক্ষুব্ধ জনতা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওইসময় তারা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সব বন্দীকে বের করে আনে এবং কারাগারে থাকা অস্ত্র, মূল্যবান সামগ্রী, টাকা-পয়সা, আসবাবপত্র, ফ্যানসহ বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও খাদ্যসামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা কারাগার যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিহ্ন। কারাগারের প্রধান ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের সুপার ও জেলারের অফিস কক্ষ ও বাসভবনের সকল আসবাবপত্র, রান্নাঘর, ক্যান্টিন পুড়ে গেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আসামিদের ওয়ার্ড, কনডেম সেল ও কারা হাসপাতাল। পুরো কারাগার লন্ডভন্ড অবস্থা থাকায় বর্তমানে কারাগারের সড়কসংলগ্ন ফটক ও ভেতরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কারাগারের ভেতরে যাতে কেউ প্রবেশ করতে বা কারাগারের আর কোনো সম্পদ যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করছেন। ভেতরে কয়েকজন কারারক্ষী সাদা পোশাকে পাহারা দিচ্ছেন।

কারা সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোটা, রামদা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে। তারা বন্দীদের ওয়ার্ড ভেঙে ফেলে ও তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিপুলসংখ্যক মানুষের হামলার মুখে কারারক্ষীরা অসহায় হয়ে পড়েন। ওইসময় কারাগারে থাকা ৫১৮ জন বন্দী পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ৭০-৮০ জন ছিলেন বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। আর অন্যরা ছিলেন বিচারাধীন ও তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলার আসামি। হামলাকারীরা ৯টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের মজুত করা খাদ্যসামগ্রীসহ টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সহায়তায় কয়েকটি অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়। এদিকে জেলা কারাগারের লুণ্ঠিত অস্ত্রসহ মালামাল ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে মাইকিং করার পর লুণ্ঠিত ৮টি অস্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল জমা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বারের একজন আইনজীবী বলেন, এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান থাকলেও কারাগার অকার্যকর থাকায় আদালতে নেওয়া হচ্ছে না জামিন অযোগ্য মামলার আসামিদের। একই কারণে পুলিশের সীমিত কার্যক্রম চালু হলেও শুরু হয়নি বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের আটক বা গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান।

জেলা কারাগারের সুপার হুমায়ুন কবীর খান বলেন, কারাগারে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১০-১২ হাজার জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। অন্যদিকে হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে পড়া কারাগারের কার্যক্রম চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

শেরপুর গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, কারাগার ভাঙচুরের পরে কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কারাগার সংস্কারের প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এক কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এরমধ্যে কিছু কাজ দ্রুত করে দেওয়া হবে। আবার কিছু কাজ করতে সময় লাগবে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে কারাগারকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সময়ের ব্যাপার। তবুও প্রাথমিক পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুতই মেরামতসহ বাকি কাজ শেষ করে কার্যক্রম চালু করা হবে।

আব্দুল্লাহ আল খায়রুম আরও বলেন, কারাগার চালু করা ছাড়া পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো যাচ্ছে না। 

Link copied!