উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে অগ্রহায়ণের শেষ দিকে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ জেলার নদী-তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ। সকাল থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়া আর বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ার কারণে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষদের। হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।
জেলার শীত নিবারণের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বিতরণ করা হয়নি কোনো কম্বল বা শীতবস্ত্র। প্রতি বছর জেলায় শীতের এ মৌসুমে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীত নিবারণের গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণ করা হলেও চলতি মাসে এ ধরণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারি বরাদ্দ কম থাকা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বরাদ্দ না দেওয়া এবং প্রশাসনিক কাজের ধীরগতির কারণে এখনো কম্বল বিতরণ কর্মসূচি শুরু করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন।
জেলার ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৯ উপজেলার ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৬১ জন মানুষের বিপরীতে ১ হাজার ৮০০টি কম্বল বরাদ্দ রয়েছে। যা প্রতি উপজেলায় ২০০টি করে বিতরণ করা হবে। আর প্রতি উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী গরম কাপড় কেনার জন্য ৩ লাখ করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ৯ উপজেলার জন্য ২৭ লাখ টাকা।
জেলায় তীব্র শীত জেঁকে বসলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত গরম কাপড় বিতরণ না করা এবং বরাদ্দ কম থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়।
চিলমারী উপজেলার অষ্টমির চর ইউনিয়নের বড় চরের মাটি কাটা শ্রমিক সাজেদা বেগম বলেন, “অগ্রহায়ণ মাস গেইল, পৌষ আসবের নাকচে, হামরা চরত থাকি, হামার খবর কাই রাখে। ঠান্ডাতে জীবন বাঁচে না কম্বল হামাক কাই দেয়?”
পাশের চিলমারী ইউনিয়নের দিনমজুর কহিনুর বেগম বলেন, “শীতের ঠান্ডাত কাম কাজ কইরবের পাইনে বাহে। বৃষ্টির মতন টপ টপ করি শীত পড়ে। এলাও কাইয়্যো কম্বল দেইল না। মেম্বারক কই ওমরা কয় এল্যাউ কম্বল আসে নাই।”
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দোকানি জহুরুল ইসলাম বলেন, “হামরা চরত মাঝত থাকি। সকাল-বিকাল কুয়াশা ঘিরি ধরে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কষ্টে পার করছি। সরকার থাকি এখনো কোনো শীতের কাপড় পাই নাই।”
সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের দিনমজুর হুজুর আলী বলেন, “মুই গরিব মানুষ বাপ, মোর গরম কাপড় কট্টি থাকি পাইম। কাল রাইত থাকি ঝড়ির নাকান শীত পড়ে। গাত (শরীর) লুঙ্গি পেচে কাজত যাবাইছি।“
রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন বলেন, “এ উপজেলায় ২০০ কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে আনা হবে।”
রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, তিনি ২০০ কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে এখনো উপজেলায় আনা হয়নি।