একটানা ২০ ঘণ্টা ধরে প্রবল ভারী বর্ষণ হয়েছে উপকূলীয় পর্যটন জেলা কক্সবাজারে। প্রবল বর্ষণে একেবারেই ডুবে গেছে কক্সবাজার শহর। আর সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যাতে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার পর্যটক।
শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, একটানা বর্ষণ আর এমন জলাবদ্ধতা গত ৫০ বছরে দেখা যায়নি। আর এমন অভাবনীয় জলাবদ্ধতার কারণে শহরজুড়ে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন হোটেলকক্ষে। শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা হোটেল থেকে বের হতে পারেননি। কোথাও যেতে পারেননি। শুধু তাই নয়, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল নিশানা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতেও নিষেধ করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি, হোটেলমালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। সেই ভারী বর্ষণ একটানা চলতে থাকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে পুরো শহরের ৮ লাখ মানুষের জীবন একেবারে থমকে যায়।
তবে গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বর্ষণের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। তবে সকাল ১০টায় আবারও ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ফের টানা কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে শহরের প্রধান সড়ক, কলাতলী সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক ডুবে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।
পর্যটকরা বলছেন, পর্যটন শহরের এমন জলাবদ্ধতা কল্পনা করা যায় না। বৃষ্টির পানি নামার কোনো পথই নেই। সড়কের পাশের নালাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরা। যে কারণে বৃষ্টির পানি সড়কের ওপর জমে আছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ যাচ্ছে।
গত অর্ধশতক ধরে এমন বর্ষণ, জলাবদ্ধতা দেখেননি কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, অপরিকল্পিত সড়ক উন্নয়ন, ঠিকমতো নালা পরিষ্কার না করা এবং শহরের পাহাড় নিধন বন্ধ না হওয়ায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের হোটেল–মোটেল জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ-রিসোর্ট সকাল সাতটা থেকে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে কলাতলী সড়ক, সুগন্ধা সড়ক, সিগাল সড়ক। এসব সড়কের দুই পাশসহ ঝিনুক মার্কেটের তিন হাজার দোকানপাট পানিতে নিমজ্জিত। ভারী বর্ষণে টিকতে না পেরে সৈকতে থাকা ৩৫টির বেশি ঘোড়া এদিক-সেদিক ছুটছে। কিছু ঘোড়া দোকানপাট ও রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নিয়েছে।
গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল–মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন পর্যটকদের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে মেয়রসহ বেশির ভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপন করেন। এখন জলাবদ্ধতা নিরসনের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোটা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ ৫৩ দিন প্রায় থমকে থাকার পর গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটকদের সমাগম ঘটছে। এই মৌসুমে অন্তত এক লাখ সমাগমের আশায় ছিলেন হোটেলমালিকেরা। তবে বৈরী পরিবেশ ও আবহাওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসের তীব্রতাও বেশি থাকবে, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।