• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়নি, চোখের সামনে ভাইডা মরে গেল’


মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম
‘কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়নি, চোখের সামনে ভাইডা মরে গেল’
সন্তানকে হারিয়ে মা নাছিমা বেগমের আর্তনাদ যেন থামছেই না। ছবি : সংগৃহীত

বাবা অসুস্থ, ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। মা নাছিমা বেগম সেলাইয়ের কাজ করে কোনোমতো সংসার চালাতেন। এ অবস্থা দেখে মায়ের সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে প্রায় তিন বছর ধরে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করছিল হৃদয় আহমেদ শিহাব (১৭)।

গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরের খাবার খেয়ে ওই দোকানে যাওয়ার পথে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শিহাবের।

নিহত শিহাব মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামের শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে।

শিহাবের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার মা–বাবা। শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ পৌঁছায়। পরে শনিবার (২০ জুলাই) জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিহাবের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার হাসান ‘স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার’ নামের দোকানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করত শিহাব। সেখান থেকে যা আয় হতো, এর মধ্যে নিজের জন্য খরচের টাকা রেখে বাকিটা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিত সে।

ঘটনার প্রসঙ্গে শিহাবের ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা বলেন, “শিহাব আমার দোকানে কাজ করত। ওই দিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে আমার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যায় সে। খাওয়া শেষে লিংক রোডে কারখানায় ফেরার সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। বুকের এক পাশ থেকে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। ভর্তি করতে চায়নি কোনো হাসপাতাল! পরে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিহাবকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। চোখের সামনে ভাইডা মরে গেল, কিচ্ছু করতে পারলাম না।”

বুধবার (২৫ জুলাই) শিহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারানোর শোকে বাক্রুদ্ধ হয়ে ঘরের এক কোণে বসে আছেন বাবা শাহ আলম হাওলাদার। সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নাছিমা বেগম। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করে কাঁদছে বোন। পরিবারটির এমন অবস্থা দেখে শোকাচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশীরাও। বাড়ির পাশের কবরস্থানে এসে ভিড় করছেন তারা। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে থেকে থেকে প্রলাপ বকছেন দাদা রফিক হাওলাদার।

শিহাবকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তার চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, “আমার বড় ভাইয়ের পরিবারে একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল শিহাব। ওর মৃত্যুতে পুরো পরিবার আমরা শোকাহত। কোনো কিছু বলার ভাষা নাই।”

শিহাবের মা নাছিমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, “আমার পোলাডা তো কোনো আন্দোলন করে নাই; ওরে ক্যান গুলি কইরা মারল? আমার একমাত্র পোলারে ক্যান মরতে হইল? আমি এখন কী নিয়া বাঁচমু? আমার পোলার কাছে তোমরা আমারে নিয়া যাও।”

শিহাবের মৃত্যুর বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, “আমি খোঁজখবর নিয়েছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। তাছাড়া তারা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা করা হবে।”

Link copied!