মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার হোগলাকান্দি গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে রাতভর থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে সংঘটিত এই সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, ছয়টি বসতঘর ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইমামপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের আমিরুল ইসলাম মেম্বার গ্রুপের সঙ্গে লালু-সৈকত গ্রুপের বিরোধ চলছিল। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ৬ এপ্রিল আমিরুল মেম্বার গ্রুপের হামলায় আহত হন লালু-সৈকত গ্রুপের আল আমিন ও রেনু মিয়া।
এ ঘটনায় মামলা করা হলে সম্প্রতি জামিন পান আমিরুল মেম্বার গ্রুপের লোকজন। এসব বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ। লালু-সৈকত গ্রুপের লোকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় আমিরুল মেম্বার গ্রুপের লোকজন। এ সময় সংঘর্ষে ‘আমিরুল মেম্বার গ্রুপের একজন মারা গেছে’ এমন একটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর লালু-সৈকত গ্রুপের লোকজন আমিরুল মেম্বার সমর্থকদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় একটি বসতঘর ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন তারা। উভয় পক্ষের মধ্যে চলে গোলাগুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। রাতভর থেমে থেমে গুলিবর্ষণ এবং ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, “গতকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একটু পর পর গুলির শব্দ পেয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, “৩-৪টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি আমি। এগুলো গুলির নাকি ককটেল বিস্ফোরণের তা বলতে পারছি না। আতঙ্কিত এলাকাবাসী যে যার ঘরে অবস্থান করছিল।”
বিষয়টি সম্পর্কে লালু-সৈকত গ্রুপের সৈকত বলেন, “বিভিন্ন কারণে আমরা এখন বাড়িতে থাকি না। বৃহস্পতিবার রাতে আমরা বাড়িতে আসব এমন খবরে আমিরুল মেম্বারের নেতৃত্বে তার লোকজন আমাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আমাদের সমর্থক সোহেল, নূর মোহাম্মদ, আহমদ আলী, বাচ্চু ও আলী আহমদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। আমাদের লোকজনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণও করেন তারা।”
আমিরুল ইসলাম মেম্বার বলেন, “আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লালু-সৈকত গ্রুপের লোকজন আমাদের ওপর দুই দফা হামলা চালায়। প্রথমবার ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে আমাদের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে আমাদের লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর আবারও হামলা চালায় তারা। এ সময় একটি বসতঘরে ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, “এরকম একটি খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পুলিশের উপস্থিতির টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা সটকে পড়ে। কত রাউন্ডের মতো গুলি হয়েছে তা বলতে পারব না তবে আমরা ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা ও পটকা উদ্ধার করেছি। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি, কেউ হতাহত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।”