বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও লক্ষ্মীপুরে থামছে না পানি বৃদ্ধি। পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকে ক্রমশ পানি বাড়ছে। এতে জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলা এখনো প্লাবিত। পানির চাপে ঢেউ পড়ছে চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, হাজীরপাড়া, দত্তপাড়া, মান্দারী, কুশাখালী, তেওয়ারীগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়নে। এসব এলাকায় ভারী বর্ষণের পানি সঙ্গে যোগ হচ্ছে নোয়াখালী থেকে আসা পানি। চারদিক পানিতে থই থই করছে। অনেক এলাকায় কোমর সমান পানি রয়েছে। ঘরবাড়ির ভেতরেও পানি।
সদরের রহমতখালী খাল, রামগতি, কমলনগরের ভুলুয়া নদী, রামগঞ্জের ওয়াপদা, বিরেন্দ্র খাল, রায়পুরের ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্ন স্থানে নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ, সেতু, কালভার্ট, রাস্তা, দোকানপাটসহ স্থাপনা নির্মাণ করায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জমা পানি নামতে বেগ পেতে হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলার চর কাদিরিয়া এলাকার বাসিন্দা তাজল ইসলাম। তিনি বলেন, অধিকাংশ বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না বন্ধ আছে। এ অবস্থায় খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে পানিবন্দী পরিবারগুলোয়। বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা সদরের সড়কগুলোও ডুবে যাওয়ায় প্রতিটি এলাকা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে যাচ্ছে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি।”
দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মামুনুর রশিদ বলেন, “হঠাৎ করে আমাদের এলাকায় পানি বাড়ছে। এলাকায় দিনভর বৃষ্টি নেই। এগুলো নোয়াখালী থেকে আসা পানি। এতে মানুষের দুর্ভোগ-কষ্ট বাড়ছে।”
চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু জানান, নোয়াখালীর পাশের সীমানায় তার ইউনিয়ন। এতে নোয়াখালীর পানির চাপ এদিকে আসছে। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাটে এখন ২-৪ ফুট পানি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, “গতকালের (২৪ আগস্ট) তুলনায় আজ (২৫ আগস্ট) পানি কিছুটা কমেছে। গড়ে ছয় ইঞ্চির মতো কমেছে। নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কটি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।”
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, নোয়াখালীর পানির চাপ লক্ষ্মীপুরে আসছে। এতে পানি কিছুটা বাড়ছে। তবে বৃষ্টি না থাকায় রায়পুর ও রামগঞ্জে পানি কমছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী দু’দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে।”