• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

‘রাক্ষুসে নদী আমাগোর সব কেড়ে নিয়ে গেছে’


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪, ০১:২০ পিএম
‘রাক্ষুসে নদী আমাগোর সব কেড়ে নিয়ে গেছে’

‘রাক্ষুসে নদী আমাগোর সব কেড়ে নিয়ে গেছে। এহন আমাগোর ঘরের চাল, বেড়া খুলে রেখেছি কিন্তু ঘর তোলার জায়গা নাই।’— কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর চর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ হাসেম খান (৮০)।

শেরপুর জেলা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া যমুনার শাখা নদী দশানী ও ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদীর মিলনস্থল সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর চর এলাকা। এই স্থানটিতে মাঝে মাঝে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এলাকাটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এবারও টানা বর্ষণে শেরপুরের এ দুই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ষার শুরুতেই ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বাড়িঘর, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট ।

জানা গেছে, দুই বছরে দশানী নদীর ভাঙনে ৬ নম্বর চর গ্রামের অনেক পরিবারের বসতভিটা, সড়ক, কবরস্থানসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একই অবস্থা ৭ নম্বর চরের বাসিন্দাদের। অনেকের জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় যেমন আবাদ ফসল হারিয়েছেন, তেমনি ভিটে মাটি ভাঙনে মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও আর নেই। তাই তারা আতঙ্কে রয়েছেন।

৬ নম্বর চর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল মিয়া, হীরা শেখ ও নাজমুল হোসেন বলেন, গত বছর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ ফেলেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও মুক্তি মেলেনি ভাঙন থেকে। তাদের দাবি, স্থায়ী সমাধানের জন্য নদীর পাড়ে পাইলিং করা খুবই জরুরি।

স্থানীয় আলফাজ আলী ও হোসেন মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ কারণে তিন দিনে প্রায় দুইশ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ত্রিশ থেকে চল্লিশটি বাড়ি। একরের পর একর আবাদি জমির সঙ্গে নদীর পেটে গেছে সবজির বাগান ও ধানের বীজতলা। ভাঙনের মুখে পড়েছে ৬ নম্বর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও দুটি মাদ্রাসা, পোস্ট অফিস, গ্রামের রাস্তা ও কবরস্থান।

ভোগান্তির একই চিত্র ৭ নম্বর চরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও শুরু হয়েছে ভাঙন। নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে স্থানীয় বাজার। ওই বাজারে চরের কয়েকটি পাড়ার মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ও অন্যান্য পণ্য বেচাবিক্রি করে। সেখানকার অধিকাংশ নদী তীরবর্তী মানুষজন তাদের বাড়ি ৫-৭ বার জায়গা পরিবর্তন করেও মিলছে না প্রতিকার।

এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মণ্ডল বলেন, “এই নদীতে দুই বছর আগে আমার বাড়ি ভেঙে গেছে। অন্যের জমিতে বাড়ি করে আছি। এবারও আমার নতুন বাড়ির অর্ধেক ভেঙে গেছে। আমি এখন ভূমিহীন হয়ে গেছি। এই নদীর ভাঙন রোধ না করতে পারলে আমার মতো শত শত লোক ভূমিহীন হয়ে যাবে।”

সাতবার ভিটে বাড়ি স্থানান্তর করে এখন আর পারছেন না মোতালেব মিয়া। তিনি বলেন, “এবার আবার ভাঙনের কবলে পড়েছি। এখন নতুন করে ঘর তোলার মতো আর নিজের জামি নাই। প্রতিবেশির জায়গাতে বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

কামারেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। একেকবার একেক এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে নদী। গত বছর ভাঙন শুরু হলে প্রশাসনের লোকজন এনে সরেজমির পরিদর্শন করে। পরে দুই জায়গায় ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি নদী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন পর্যায়ে ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। 

Link copied!