• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

২৪৫ সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন


বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম
২৪৫ সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

বরগুনায় ২৪৫টি লোহার সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। এছাড়া বিকল্প সড়ক না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমতলীতে সেতু ভেঙে ৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় ২৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতু শনাক্ত করা হয়েছে। আমতলী উপজেলায় ৯৯টি, তালতলী উপজেলায় ২৮টি, বরগুনা সদর উপজেলায় ৬১টি, বামনা উপজেলায় ২৫টি, বেতাগী উপজেলায় ১৬টি ও পাথরঘাটা উপজেলায় ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০০২ সালে ফুট ওভারব্রিজ প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নায়েব বাড়ি সেতু নির্মাণ করে। এই দুই ওয়ার্ডের একমাত্র সংযোগ সেতুটি বিগত ৭ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। ভাঙা অংশে কোনোরকম সুপারি গাছের গুড়ি দিয়ে সাঁকো বানিয়ে পার হচ্ছেন এলাকাবাসী। কর্তৃপক্ষ ২২ বছরে কোনোরকমের সংস্কার বা বিকল্প পথের ব্যবস্থা করেনি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।  

একই প্রকল্পের আওতায় ২০০৮ সালে আমতলী উপজেলায় আউয়াল নগর সেতু নির্মাণ করে। সেতুটির একপাশ ডেবে যাওয়ার পাশাপাশি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে লোহার অ্যাঙ্গেল। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে লোহার খুঁটিও। যানবাহন ছাড়াও মানুষ হাঁটলেও ঝাঁকুনি দেয়। তবে বিকল্প পথ না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই সেতু পার হচ্ছে যানবাহন।

এমন চিত্র দেখা গেছে জেলার দুই শতাধিক লোহার সেতুতে। এসব সেতুর অধিকাংশতে নেই ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। সেতু ভেঙে গেলে তার খোঁজ নেন না কর্তৃপক্ষ। এতে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। গত দুই বছরে জেলায় ৭টি সেতু ধসে মারা গেছেন ৯ জন।

সদর উপজেলা আয়লা পাতাকাটার ইউনিয়নের অটোরিকশা চালক মো. হিরন মিয়া বলেন, “মোগো দুঃখ কেউ দ্যাখবে না। পাঁচ বচ্ছর ধইরা মোরা কষ্ট হরি, কেউ মোগো দিকে চায় না। মোরা একটা গার্ডার সেতু চাই।”

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তৎকালীন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী যতগুলো লোহার সেতু নির্মাণ করেছেন, তার অধিকাংশই ভেঙে গেছে। ওই সেতুগুলোতে রেলপাটির বীম দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা দেয়নি। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তা ভেঙে গেছে।

বামনা উপজেলার শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের এলাকায় সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর বীম ভেঙে গেছে। পাটাতন উঠে গেছে। সেতু দিয়ে ভারি যানবাহন চলতে পারে না। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়। আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হচ্ছি। ৫-৭ বছরের ভেতরে কিভাবে সেতু ভেঙে যায়। তদন্ত করে সেতু নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

বরগুনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, এ পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ২৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করা হয়েছে। এখনো এ সংখ্যা বাড়তে পারে। এগুলোর মধ্যে কতগুলো সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ সেটা নির্ণয় করে বাজেট আকারে মন্ত্রালয়ে পাঠানো হবে। এরপর বরাদ্দ পেলে ঝূঁকিপূর্ণ সেতু সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হবে। 
 

Link copied!