• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চার বছরে নির্মাণ হয়েছে তিনটি পিলার


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
চার বছরে নির্মাণ হয়েছে তিনটি পিলার
ঝিনাই নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর পিলার। ছবি : প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নে ঝিনাই নদীতে সেতুর অভাবে আশপাশের উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছে প্রায় দুই-তিন লাখ মানুষ। ঝিনাই নদীর এক পাড় ভেঙে যাওয়ায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুর ভাঙা অংশ। নদী দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই নৌকা করে পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। প্রায় চার বছর আগে একটি নতুন ব্রীজ নির্মাণ শুরু হলেও মাত্র তিনটি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সময়মত ব্রীজ না হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা গাফলতি ও অবহেলাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

জানা যায়, ২০০০ সালে জেলার বাসাইল উপজেলার কাশিল উত্তর পাড়া গ্রামে ঝিনাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে বন্যায় সেতুর কিছু অংশ ভেঙে যায়। এরপর থেকে সেতু দিয়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বন্ধ হয়ে যায় ভারী যানবাহন চলাচল। ২০২০ সালে সেখানে নতুন করে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ জন্য আগের সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। তবে দুই বছরের মধ্যে নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও চার বছরে নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র তিনটি পিলার। এরপর কাজের এমন ধীরগতির কারণে মাঝপথে বাতিল করা হয় কার্যাদেশ। পরিবর্তন করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগের কার্যাদেশ বাতিল করে গত এপ্রিল মাসে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ঝিনাই নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর পিলার। ছবি : প্রতিনিধি

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২৭০ মিটার সেতুটি নির্মাণের জন্য ২৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩৯ টাকার দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ সেতুটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পায় মেসার্স ময়নুদ্দিন লিমিটেড এবং এম এস দ্বীপ কনস্ট্রাকশন জেবি নামের ঠিকাদারি দুই প্রতিষ্ঠান। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নদীর পাড়ে মাত্র তিনটি পিলার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে সেতুর অ্যাপ্রোচের সীমনা নির্ধারণ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কার্যাদেশ বাতিল করে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সিআইভি আরআরপি প্রকল্পে পুনরায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সেতুটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পেয়েছে দূর্গা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতুটি ছিল জেলার বাসাইল, কালিহাতী, মির্জাপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। তবে ২০০৭ সালের বন্যায় সেতুটির বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা। ঝিনাই নদীটি বয়ে গেছে মির্জাপুর ও বাসাইল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে। উপজেলার উত্তরে রয়েছে কাশিল, বাসাইল, কাউলজানী ও ফুলকী ইউনিয়ন। দক্ষিণে রয়েছে হাবলা, কাঞ্চনপুর, ফতেপুর ও ডুবাইল ইউনিয়ন।

স্থানীয় বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই চারটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নৌকা নদী পার হচ্ছেন। বর্ষায় এ ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। প্রায় চার বছর পার হলেও সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আমরা চাই অতি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করা হোক। মরার আগে যেন সেতু দিয়ে পারাপার হতে পারি।”

কাশিল বিয়ালা নাকাছিস (কে.বি.এন) বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব খান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি নিজেও ওপার থেকে স্কুলে আসি। আমাদের ১২ মাসই নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। যেহেতু নদীর পাড়েই আমার স্কুল। নৌকা সময়মতো ধরতে না পারলে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হয়। আমার স্কুলের প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন এই নদী পারাপার হয়। সাধারণ লোকজন তো আছেই। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ হাজার লোকের যাতায়াত আছে এই নদী পথে।”

সেতুর অভাবে নৌকা দিয়ে নদী পাড় হচ্ছেন স্থানীয়রা। ছবি : প্রতিনিধি

আইয়ুব খান আরও বলেন, “সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয় হাটের দিন। সেসময় দেখা যায় মাঝে-সাঝে নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে। আমি কোনো লিখিত অভিযোগ করিনি। তবে বিভিন্ন সময় ইউএনও, শিক্ষা মাধ্যমিক অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবকে বিষয়টি জানিয়েছি। শুনছি এই সেতুটি আবার পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে।”

কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান মিয়া বলেন, “২০২১ সালে এই সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হলেও কয়েক মাসেই কাজ বন্ধ করে বিল তুলে নিয়ে যায় বলে শুনেছি। সেতু নির্মাণের জন্য যে সব পণ্য প্রয়োজন সেগুলোর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এখানকার মানুষ।”

টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “২০২০ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করার অনিহা প্রকাশ করায় কাজ বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা শেষ হয়েছে। কাজ পেয়েছে দূর্গা এন্টারপ্রাইজ নামে জামালপুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।”

Link copied!