শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল এখন মাদকসেবীদের কাছে মাদক সেবনের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগী নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের অভিযোগ, নেশাখোরের দল প্রকাশ্যে ওয়ার্ডে বসেই মাদক গ্রহণ করেন। বাধা দিতে গেলে শুনতে হয় অশ্রাব্য গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি। অন্যদিকে এর প্রতিকার চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শহরের নারায়ণপুর এলাকায় ১১০ শতাংশ জমির ওপর ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ৮ তলা জেলা সদর হাসপাতালের নতুন ভবন তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর হাসপাতালটি উদ্বোধন হয়। এটি চালু হওয়ার পর থেকে জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী থেকে আসা বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এছাড়া জামালপুরের বকশিগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর এবং কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার রোগীরাও এই হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালের আউটডোরে ৮০০ থেকে ১০০০ এবং ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন।
শ্রীবরদীর বাবলাকোনা থেকে আসা রোগীর স্বজন আইনুদ্দীন চিশতি বলেন, মাদকসেবীদের ভয়ে হাসপাতালে আগত রোগী-রোগীর স্বজন ছাড়াও কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সরা সব সময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকেন। কারণ হাসপাতালে প্রকাশ্যে মাদক গ্রহণ করে স্থানীয় মাদকসেবী বখাটেরা। বাধা দিতে গেলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এমনকি জীবননাশের হুমকিও দেয় মাদকসেবীরা।
সদর উপজেলার ভাতশালা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর স্বামী আকবর হোসেন বলেন, নেশার টাকা জোগার করতে মাদকসেবীরা হাসপাতালে চুরি করে। অনেক সময় রোগী বা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা-পয়সাও ছিনতাই করছে তারা। আর ছিনতাইয়ে সুবিধা করতে না পারলে নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের কাছ থেকে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত জোর করে আদায় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা জানান, মাদকসেবীদের ভয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত সকলেই তটস্থ থাকেন। কখন কে মাদকসেবীদের খারাপ আচরণের শিকার হন, এই আতঙ্কে সময় কাটে নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর। শুধু তাই না কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পায় না। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে এরইমধ্যে কয়েকজনকে মারধরের শিকার হতে হয়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, “নিরাপত্তা জোরদার করতে হাসপাতাল এলাকা ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন এবং র্যাবকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এ বিষয়ে তারা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”