• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজও সংরক্ষণ হয়নি একাত্তরের গণহত্যার সেই ‘রিকশাস্ট্যান্ড’


এস. কে. সাহেদ, লালমনিরহাট
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৪, ১০:০০ পিএম
আজও সংরক্ষণ হয়নি একাত্তরের গণহত্যার সেই ‘রিকশাস্ট্যান্ড’
বাঙালিদের হত্যার পর এই স্থানে স্তুপ করে রাখে পাকিস্তানিরা। ছবি : প্রতিনিধি

দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার স্থান লালমনিরহাট রেলওয়ে রিকশাস্ট্যান্ড। এই রিকশাস্ট্যান্ডে নিরীহ ৪ শতাধিক বাঙালিকে দাঁড় করিয়ে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৪ ও ৫ এপ্রিল লালমনিরহাট শহরের রেলওয়ে স্টেশনের রিকশাস্ট্যান্ডে রংপুর থেকে আসা ট্রেনযাত্রী, রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ প্রায় ৪ শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। সেদিন গুলিবিদ্ধ মানুষগুলো মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। তখন তাদের দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে পৈশাচিক কায়দা হত্যা করা হয়। পরে মরদেহগুলো ভ্যানে করে নিয়ে রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসের পেছনে একটি গর্তে ফেলে দেয়। যেখানে গড়ে উঠেছে একটি গণকবর।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেদিন রেলওয়ে সাহেবপাড়া কলোনি, রেলওয়ে হাসাপাতালের চিকিৎসক, রোগী, স্বজন, নার্স, আয়া ও হাসপাতালের কর্মচারিদের যাকে যেখানে পেয়েছে নির্বিচারের হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নারী, কিশোরী, যুবতী ও কন্যা শিশুদের পাশবিক যৌন নির্যাতন করার পর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

সেইদিন পায়ে গুলি লাগলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান জেলা শহরের প্রবীণ রংমিস্ত্রি আব্দুর রশিদ। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “সেই ভয়াল দিনের কথা মনে পড়লে এখনো শরীর শিউরে ওঠে। ভয়ানক ওই দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছি। জিবন মৃত্যুর মাঝখানে ছিলাম। সবাইকে যখন গুলি করে তখন আমি মাটিতে লুটে পড়ি। আমার পায়ে গুলি লাগে। মারা গেছি ভেবে তারা অন্য লাশের সঙ্গে আমাকেও গর্তে ফেলে দেয়। পরে পাক হানাদার বাহিনী চলে গেলে পায়ে গুলি লাগা রক্তাক্ত অবস্থায় হামাগুড়ি দিতে দিতে বাড়িতে চলে আসি। পরে গোপনে রংপুর হাসপাতালে গিয়ে গুলি বের করি।”

সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার আবু বকর সিদ্দিক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সেদিনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের নির্মম সাক্ষী রেলওয়ে গণকবর। তৎকালীন এখানে ছিলো গর্ত। সেখানে লাশগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছিল। পরে লাশগুলো স্থানীয়রা সেখানেই মাটি চাপা দেন। সেদিনের সেই বর্বর গণহত্যার স্থান লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রিকশাস্ট্যান্ড। স্বাধীনতার এতোদিন পরেও ওই স্থানটি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হয়নি। এখানে শহীদ স্মৃতি স্মরণে আলাদাভাবে মিনার নির্মাণ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার দাবী।“

আবু বকর সিদ্দিক আরও জানান, এখানে শহীদদের অনেক পরিবার এখনো বেঁচে আছে। রেলওয়ে রিকশাস্ট্যান্ডের গণহত্যার স্থানটিতে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Link copied!