• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটক টানছে যাদুকাটা নদীর তীরের আগুনরাঙা শিমুল ফুল


জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:০১ পিএম
পর্যটক টানছে যাদুকাটা নদীর তীরের আগুনরাঙা শিমুল ফুল

ঋতুরাজ বসন্তে সবুজের আবৃত ভেদ করে বাগানের ৩ হাজারের অধিক গাছের ডালে ডালে ফুটেছে আগুনরাঙা শিমুল ফুল। সেই সঙ্গে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর ফুলের গন্ধ না থাকলেও এর যেন অন্য রকম শুভাষ ছড়াচ্ছে। আর দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন রক্তরাঙা লাল ফুল বিছিয়ে ডাকছে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের। সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাগানে বাগানটিতে ঢল নেমেছে দর্শনার্থীদের।

মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষে যাদুকাটা ও মাহারাম নদীর কোল ঘেঁষে বাগানটিতে প্রকৃতি যেন আপন সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে অপরুপ সাজে। লাল শিমুল ফুলে পুরো এলাকা ছেয়ে আছে। তা দেখতে প্রকৃতি প্রেমীদের পদচারণায় মুখর শিমুল বাগান।

দেশের উত্তর পূর্ব দিকের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উপজেলায় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাও গ্রামে দেশের বৃহত্তর এই শিমুল বাগানের অবস্থান।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জয়লান আবেদিন বাগানটি তৈরি করেন। আর তার নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।

বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক, সৌন্দর্য পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমীদের আগমন বাড়ায় বাগানটি ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপার্জনের পথ সৃষ্টি হয়েছে। বাগানের ভেতর অনেক যুবক আগতদের ছবি তুলে, কেউবা ঘোড়ায় চড়িয়ে, কেউবা ফুসকা চটপটি বিক্রি করে, শিশুরা ফুলের মালা ও বাগানে ভালোবাসার চিত্র এঁকে রাখে সেখানে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা ছবি তুলে টাকা দিচ্ছে। এতে করে আয় করছেন তারা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে বালু আবরিত ৯৮ বিঘা অনাবাদি পতিত জমিতে ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন সখের বসে সারিবদ্ধভাবে ৩ হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপন করেন। সময়ের ব্যবধানে এই বাগানটিই এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল ফুলের গালিছা বিছিয়ে ডাকছে এই শিমুল বাগান।

বাগানের পাশের মানিগাও গ্রামের বাসিন্দা শামিম আহমেদ জানান, সারা বছরই দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমী ও পর্যটকদের আগমন ঘটে এই বাগানে। তবে রক্তরাঙা ফুটন্ত শিমুল ফুল দেখতে এই সময়েই পর্যটকরা বেশি আসেন। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থ খারাপ থাকার আগতরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও স্যানিটেশন ও হোটেলে প্রর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তারা।

শরীফ আহমেদ নামের এক পর্যটক জানান, বাগানে সারি সারি গাছে লাল টুকটুকে শিমুল ফুল ফুটেছে। ফুলের সৌরভ আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক বাগানে পরিবেশটা অন্যরকম। আর এই সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের আগমনও বাড়ছে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লতিফ সরকারসহ কয়েকজন জানান, বাগানটি বাইরে থেকে এক রকম, আর ভেতরে আরেক রকম। এক কথায় অসাধারণ। কিন্তু পর্যটকদের জন্য কোনো ধরনের সুবিধা বাগানে নেই। বাগানে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন না থাকায় নারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সড়ক পথে অবস্থা বেশি খারাপ।

শাকিল আহমেদ নামের আরেক পর্যটক জানান, বাগানের সৌন্দর্যে মনে ভরে গেলেও বাগান মালিকের পক্ষ থেকে বাগানে পর্যটকদের জন্য আধুনিকায়ন করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে আগতরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এবং এখানে আসার আগ্রহ আরও বাড়বে।

বাগান মালিকের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন বলেন, “বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও আগত পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে চেষ্টা করেছি। বাগানে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে এখানে বেড়াতে আসেন। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে শিমুল ফুল ফোটার পর থেকে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। সরকারিভাবে পর্যটকদের স্বার্থে চলাচলের সড়কটি গুরুত্ব সহকারে দ্রুত মেরামত করলে আগতরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।”

Link copied!