স্মার্ট মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাচ্ছে চীন। ভিশন ২০২৭ টার্গেট করে চার হাজার ২৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৫০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাকি তিন হাজার ৭৮২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দেবে চীন। চীন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের কাজ পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি)। বন্দর সংশ্লিষ্টদের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক সভায় মোংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন শীর্ষক এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশ, যেমন ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোংলা বন্দর কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এটি জল ও স্থলভাগের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে। কিন্তু এখানে কোনো কনটেইনার জেটি নেই। এই বন্দরে বর্তমানে এক কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং এক লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। কনটেইনার জাহাজের জন্য নির্ধারিত কনটেইনার বার্থ এবং যথাযথ সংরক্ষণ করার জন্য কনটেইনার ইয়ার্ড প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় মোংলা সমুদ্রবন্দরের আধুনিকায়নের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মোংলা বন্দর দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সীমান্ত এলাকার কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এসব দেশের জন্য ট্রানজিট কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ ছাড়া নতুন খুলনা-মোংলা রেলপথের কারণে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিং অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকল্পে প্রশাসনিক ও অন্যান্য অস্থায়ী কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ভূমি উন্নয়নে ৩২৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পেভমেন্টের (আরসিসি ওয়ার্কস) জন্য ৫৫৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। মেরিন স্ট্রাকচার তৈরিতে ৬৬৯ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট কিনতে ব্যয় হবে এক হাজার ৫৬ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান জহিরুল হক বলেন, প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। এখন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে। ২০২৭ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জহিরুল হক জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরে স্মার্ট ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং সিস্টেম, একটি হ্যাজার্ড কার্গো সেভ জোন, দুটি কনটেইনার জেটি, একটি কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণসহ অধিক গভীরতাসম্পন্ন জাহাজ চলাচলের জন্য নৌ চ্যানেল খনন করা হবে।
জহিরুল হক বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্মার্ট ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনটেইনার ওঠানো এবং নামানো যাবে। একেকবারে এই স্মার্ট ইকুইপমেন্টের চার লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকবে। এতে বন্দর ব্যবহারকারীদের অর্থ ও সময় দুটিই সাশ্রয় হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর বাংলাদেশর প্রথম স্মার্ট বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এর ফলে দেশি-বিদেশি আমদানি-রপ্তানিকারকরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।