আব্দুর রহিম (৩৯)। একসময় মাদ্রাসায় পিয়ন পদে চাকরি করতেন। করোনার সময়ে ওই মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। চাকরি হারিয়ে বহুদিন বেকার ছিলেন। অর্থাভাবে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে নানাজনের কাছ থেকে ধারে টাকা নিয়ে শাকসবজির ব্যবসা শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি পাকা বাড়ি করার স্বপ্ন দেখছেন।
আব্দুর রহিমের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় শেরপুর শহরের কলেজ রোডে। রহিম ওই এলাকার ৯৮ নম্বর বাগড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কালীর বাজার রোডে প্রতিদিন রাতে সবজি বিক্রি করেন।
রহিম জানান, তার বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুরে। এখন তিনি স্থায়ীভাবে শেরপুর শহরের চাপাতলী এলাকার শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন।
১৯৯৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর আর্থিক অনটনের কারণে আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। পরে জীবিকার তাগিদে একসময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাশিগঞ্জ বাজারের একটি মাদ্রাসায় পিয়ন পদে যোগ দেন। ২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ওই মাদ্রাসাটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আয়ের আর কোনো পথ না থাকায় স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। নতুন একটা চাকরির জন্য অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু কেউ তার কথায় সাড়া দেয়নি। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে চলে আসেন শেরপুরে। আর্থিক সংগতি না থাকায় সেখানে কোনোরকমে জীবন পার হচ্ছিল। চরম দরিদ্রতার মুখে এলাকার পরিচিত ৩-৪ জনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর ২০ হাজার টাকায় তিন চাকার একটি ভ্যানগাড়ি কেনেন। আর বাকি পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন শাকসবজির ব্যবসা।
রহিম বলেন, প্রতিদিন দুপুরে জেলা সদরের কুসুমহাটি, ভীমগঞ্জ, নন্দীর বাজার, পোড়ার দোকান এবং লছমনপুর এলাকার বিভিন্ন হাট ও বাড়িতে ঘুরে পাইকারি দামে আলু, পটোল, ঝিঙা, ঢেঁড়স, মিষ্টিকুমড়াসহ ১২-১৪ পদের সবজি কেনা শুরু করেন। এ ছাড়া পছন্দ অনুযায়ী লালশাক, ঢেঁকিশাক, মুলাশাক, লাউপাতাসহ আরও কয়েক আইটেমের পাতা জাতীয় সবজি ভ্যান বোঝাই করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নয়আনী বাজার এলাকার কালীর বাজার গলিতে চলে আসেন। সেখানে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি। প্রতিদিন গড়ে ৮০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতে থাকে।
কিছুদিন পর সব দেনা একে একে পরিশোধ করে দেন। পরে ব্যবসা আরও বড় করার জন্য স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহে ১৮০০ টাকা হারে ওই এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যাচ্ছেন।
রহিম বলেন, “শ্বশুরবাড়ির এক চিলতে জায়গায় কাঁচা ঘরে এত দিন ছিলাম। ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে তাই ওই জায়গাতেই এবার ইট কিনে নতুন ঘর তৈরির জন্য হাত দিয়েছি। তার এক ছেলে আবির হোসেন (১০) ও মেয়ে নূর জাহান (৬) চাপাতলী এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে রহিম বলেন, চাকরির জন্য আর কোনো চেষ্টা তিনি করতে চান না। এই ব্যবসাই সামনের দিনে তাকে আরও স্বাবলম্বী করবে।