গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চর ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসিব মৃধা। মাস্টার্স পাস করে চাকরির পেছনে না ঘুরে হয়েছেন উদ্যোক্তা। কলেজজীবনে এক বিঘা জমিতে তিনটি গরু আর দেড় শ আমগাছের চারা দিয়ে শুরু করেছিলেন কৃষি খামার। সাত বছরে আমবাগান ও খামারটি এখন ৫২ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত। ৫০ বিঘা জমিতে নানা জাতের আমবাগান ও বাগানের পাশে দুই বিঘাজুড়ে দুগ্ধ খামার। তার এই কৃষি খামার থেকে প্রতিবছর আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। বাগান ও খামারে মিলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ১৫টি পরিবারের। সব মিলিয়ে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবার দুই বিঘা জমিতে দেড় শ আমগাছের চারা ও তিনটি গরু দিয়ে কৃষি খামার শুরু করেন হাসিব মৃধা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত খামারে সময় দিতেন তিনি। ধীরে ধীরে কৃষি খামারটির আয়তন বাড়তে থাকে। খামারের নাম দিয়েছেন হাজেরা অ্যাগ্রো ডেইরি ফার্ম।
৫০ বিঘাজুড়ে আম্রপালি, আশ্বিনা, হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান। এ বছর আমের ফলনও হয়েছে ভালো। মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২৫ মণের মতো আম পাড়া হয় গাছ থেকে। সেসব আম স্থানীয়সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজারে বিক্রি করেন তিনি। এ বছরে এখন পর্যন্ত তিনি এক হাজার মণ আম বিক্রি করছেন। গাছে এখনো প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ মণের মতো আম।
আমবাগানের পাশে দুই বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন একটি দুগ্ধ খামার। খামারে এখন গরুর সংখ্যা ৫০টি। প্রতিদিন এ খামার থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এসব দুধ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে মিল্ক ভিটাসহ স্থানীয় বাজারের বড় বড় মিষ্টির দোকানে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত ষাঁড় ও গাভি থেকে জন্ম নেওয়া বাছুর বিক্রি করে আসে বাড়তি আয়। পাশাপাশি গরুর গোবর থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার।
আমবাগান ও খামারে মিলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ১৫টি পরিবারের। প্রতিটি কর্মচারীর বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। স্থানীয়রাও দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন বাগান ও খামারে। এ কৃষি খামারের কর্মচারীদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ শেষে হাসিবের প্রতিবছর আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা হাসিব মৃধা বলেন, উচ্চশিক্ষা নিয়ে যে শুধু চাকরি করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। সবাই চায় তার নিজের একটা প্রতিষ্ঠান হোক। আমিও তাই চেয়েছি। তিনটি গরু দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন আমার খামারে গরুর সংখ্যা ৫০। ছোটবেলা থেকেই আমি ভেবেছিলাম অন্যের অধীনে চাকরি না করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করি। আমার এই কৃষি খামারে মোট ১৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন। আমি তাদের পরিবার নিয়ে খামারে থাকার সুযোগ করে দিয়েছি।”
স্থানীয়ভাবে আমের পাইকারি বাজার না থাকায় আশানুরূপ ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ার কথা জানিয়ে হাসিব মৃধা বলেন, “স্থানীয় যে কৃষি সংস্থাগুলো রয়েছে, তারা যদি আমাদের বাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। বাইরের ব্যবসায়ীরা এলে তখন একটা প্রতিযোগিতা হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা এক প্রকার জিম্মি। তাই প্রতিবছর আমের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”
দুগ্ধ খামার থেকে উৎপাদিত দুধ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে মিল্ক ভিটাসহ বেশ কয়েকটি বাজারের মিষ্টির দোকানে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়ে হাসিব বলেন, “৫০ বিঘা জমিতে আমবাগানের পাশাপাশি দুই বিঘা জমিতে একটি দুগ্ধ খামার করেছি। সেখানে প্রায় ৪০টি গাভি রয়েছে। প্রতিটি গাভি দুধ দেয়। প্রতিদিন সব মিলিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ লিটার দুধ দিচ্ছে।”
কৃষি খামারের এক কর্মচারী বলেন, “ছয় বছর ধরে আমরা এই খামার ও বাগানের কাজ করছি। মাসে আমাদের প্রতিজনের বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে। এখানে কাজ করেই আমাদের ১৫টি পরিবারের সংসার চলে।”
কাশিয়ানী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কাজী এজাজুল করীম বলেন, “হাসিব বড় পরিসরে একটি কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তাকে সব সময় কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছি”