• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
সিসিকের অপরিকল্পিত উন্নয়ন

যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী আর গর্তে ঘটছে দুর্ঘটনা


রাজীব রাসেল, সিলেট
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৯:০৩ এএম
যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী আর গর্তে ঘটছে দুর্ঘটনা

দুই বছর আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ‘মরণফাঁদে’ পড়ে আহত হয়েছিলেন কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। তারপর অনেকদিন পড়েছিলেন হাসপাতালের বিছানায়। বাসায় ফিরলেও আর সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি তার। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মারা যান তিনি।

প্রায় একই পরিণতির হতে পারত সাংবাদিক, ব্যাংকার ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য মতিউল বারি চৌধুরীর। সিসিকের ‘মরণফাঁদের’ শিকার হয়ে রিকশা উল্টে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত ঝরেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজের বাসায় বিশ্রামে থাকলেও বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারতো।

ঘটনাটি ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের। রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মতিউল বারি চৌধুরী। নগরীর শিবগঞ্জ সেনপাড়ার রাস্তা কেটে করা ছোট নালায় রিকশার চাকা হঠাৎ আটকে গেলে ছিটকে পড়েন তিনি। হাত, পিঠ এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে জখম নিয়ে ছুটে যান চিকিৎসার জন্য। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় অবস্থান করলেও এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, সারা শরীরে ব্যথা আর জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের। একবার উন্নয়ন কাজ শুরু হলে তা আর শেষ হতে চায় না। এমন কচ্ছপ গতির কাজে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। শুধু কি দুর্ভোগ? এতে প্রাণ পর্যন্ত যাচ্ছে! কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যু হয়েছে, আরও অন্তত শতাধিক মানুষ মরতে মরতে বেঁচে গেছেন। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সাংবাদিক ব্যাংকার মতিউল বারি চৌধুরী।

সরেজমিনে নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় গেলে দেখা যায়, শিবগঞ্জ-খরাদিপাড়া রাস্তা থেকে সেনপাড়া রাস্তায় প্রবেশের পর প্রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত রাস্তার এখানে-সেখানে এলোমেলোভাবে রাখা কংক্রিট, বালু, ইট, পাথরসহ আরও নানা ধরণের নির্মাণসামগ্রী। রাস্তার দুইদিকেই খোলা ড্রেন যেন মৃত্যুকে আহ্বান করছে। এর মধ্যে আবার এলোমেলোভাবে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় রাস্তাটি এতই সংকুচিত হয়েছে যে রিকশায় চলাচল করতেও প্রয়োজন পড়ে বাড়তি সতর্কতার। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলে গোটা রাস্তাটিই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

এলাকাবাসী জানান, ছোটোখাটো দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু শেষ হওয়ার কোনো নাম নেই। বারবার তাগাদা দিলেও কেউ কারও কথা শুনছে না। বিশেষ করে যারা কাজ করছেন, সেই ঠিকাদারদের যেন কোনো দায়-দায়িত্বই নেই। তারা যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী ফেলে রেখে রাস্তাটিকে মরণফাঁদে পরিণত করেছেন। এমনকি কোথাও কোনো বিপদ সংকেত বা লাল নিশানাও কেউ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না।

মতিউল বারি যে নালায় পড়েছিলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত মঙ্গলবার সেই নালাটি ভরাট করেছেন সিসিকের কর্তারা। একটা লাল কাপড়ও সেখানে টানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক লেখা পোস্ট করে মনের খেদ প্রকাশ করছেন সচেতন নাগরিকদের কেউ কেউ। তেমনি এক ফেসবুক ব্যবহারকারী আলী ওয়াসেকুজ্জামান চৌধুরী ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, “২০২০ সালে ড্রেন ও রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছিল আমাদের মহল্লায়। মাশাল্লাহ, সিটি করপোরেশন সুন্দর তত্ত্বাবধান করে ২০২৩ সালে এসে রাস্তার কাজ প্রায় ২৫ ভাগের মতো সম্পন্ন করতে পেরেছে। অবশ্য ড্রেন প্রায় শতভাগ। আমরা ভাঙা রাস্তায় নানা কায়দা-কানুন করে চলতে শিখেছি। আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে এই মহাপরিকল্পনা শেষ হবে। মোটামুটি পদ্মা সেতুর মতো টাইম লাগা এই শিবগঞ্জ-দক্ষিণ বালুচর সড়কটির দৈর্ঘ্য ১.৫ কিলোমিটার।”

এভাবে সচেতন মহল নিজেদের ক্ষোভ ও দুর্ভোগের কথা প্রকাশ করলেও টনক নড়ে না সিলেট সিটি করপোরেশনের। জনগণের কষ্ট আর দুর্ভোগের ব্যাপারে ভাবতে তাদের বয়েই গেছে—ভাবখানা অনেকটা এরকম।

ফোন রিসিভ না করায় এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মন্তব্য জানা যায়নি।

এদিকে সাংবাদিক মতিউল বারি চৌধুরী আহত হওয়ার খবর জানতে পেরে মঙ্গলবার সকালে সেনপাড়ার রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গফফার। তিনি জানান, ঘটনা সত্য। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে এবং তদন্তে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার বিষয়টি প্রমাণ হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!