• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেতশিল্পের নান্দনিকতা


এম এ রাজ্জাক, নওগাঁ
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম
হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেতশিল্পের নান্দনিকতা

নওগাঁয় প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ ও বেতশিল্পের নান্দনিক ব্যবহার। বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। তবু বাপ-দাদার এই পেশাকে এখনো জীবিকার প্রধান বাহক হিসেবে আঁকড়ে রেখেছে উপজেলার কিছু পরিবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে নওগাঁর মহাদেবপুর, মান্দা ও নিয়ামতপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৩০টি পরিবারই বর্তমানে এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন। যেখানে এক যুগ আগেও এ উপজেলায় চার শতাধিক পরিবার এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ শেষ করে নারী কারিগররা বাঁশ দিয়ে এসব পণ্য বেশি তৈরি করে থাকেন। বর্তমানে বেত তেমন সহজলভ্য না হওয়ায় বাঁশ দিয়েই এসব পণ্য তৈরি করছেন এই কারিগররা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অনেক পরিবারই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব বাঁশ শিল্পের কারিগররা তাদের পূর্বপুরুষের এ পেশা আঁকড়ে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন। দিন দিন বিভিন্ন জিনিসপত্রের মূল্য যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না এই শিল্পের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের মূল্য। যার কারণে কারিগররা জীবন সংসারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।

একসময় নওগাঁসহ দেশের ঘরে ঘরে ছিল বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রীর কদর ছিল অনেক। কালের আবর্তনে আর চোখে পড়ে না এই পণ্যগুলো। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশশিল্প আজ হুমকির মুখে। বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি হয় শিশুদের দোলনা, র‌্যাক, পাখা, ঝাড়ু, টোপা, ডালা। বাড়ির নারী ও পুরুষরা সাজি, কুলা, মোরা, পুরা, দাঁড়িপাল্লা, ঝাঁপি, ফুলদানি, ফুলের ডালি, খাবার ঘরের ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, টেবিল, সোফা সেট, খাট, মাছ ধরার পোলোসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাব গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র নান্দনিক ব্যবহার ছিল।

একসময় যে বাঁশ ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সেই সঙ্গে বাড়েনি এসব পণ্যের দাম।

মান্দা উপজেলার সতীহাট ঋষিপাড়ার এক কারিগর বলেন, “হাতে গোনা আমরা কয়েকটি পরিবার আজও এ কাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালি তৈরি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-২০ টাকা করে লাভ হয়। বর্তমানে আগের মতো আর বেশি লাভ হয় না।”

সতীহাট গ্রামের জিতেন ঋষি বলেন, “আমাদের এই পেশার উন্নতিকল্পে যদি সরকারিভাবে ঋণ দেওয়া হয়, তাহলে বাঁশ ও বেতশিল্পের কারিগররা স্বাবলম্বী হবে। এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হব।”

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সিদ্দিকী (রুমা) বলেন, বাঁশ ও বেতশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসা দরকার।

জেলা কৃষি উপপরিচালক আবুল হোসেন বলেন, বাঁশ ও বেতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।

Link copied!