কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বের কারণে ২০২৩ সালের নতুন বছরের নতুন বই পায়নি ৩০০ শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসায়।
প্রতিবছর ১ জানুয়ারি সারাদেশে উদযাপিত হয় বই উৎসব। কিন্তু দাশিয়ারছড়ায় অবস্থিত এই মাদ্রাসাটিতে এবার বই উৎসব না হওয়ায় খালি হাতে ফিরতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের ।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলে, “রোববার মাদ্রাসায় গেছিলাম বই আনতে। আমারা বই আনতে গিয়ে অনেকক্ষণ ছিলাম। পরে একজন স্যার বললো আমাদের বই আসেনি, পরে দেয়া হবে।”
আরেক শিক্ষার্থী হাবিবুর বলে, “আমরা ১ তারিখ নতুন বইয়ের জন্য মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু বই না আসায় বই পাইনি।”
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসাটির সুপার (সুপারিন্টেনডেন্ট) পদটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও শাহানুর আলমের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। নিজেদের সুপারিন্টেনডেন্ট দাবি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাইকোর্টে একটি মামলা চলছে। যার ফলশ্রুতিতে বই উৎসবের দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষক সরকারি বরাদ্দকৃত বই না পেয়ে নতুন বই দিতে পারেনি মাদ্রাসার তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে।
বই বিতরণ না করায় মাদ্রাসাটির অনেক অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাসির বলেন, “বই বিতরণের দিন দুই সুপারের দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষার্থীরা বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছে। যা খুবই কষ্টদায়ক। আমরা বাচ্চাদের বরাদ্দকৃত বই দ্রুত বিতরণ চাই।”
মো. নুর আলম নামের এক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে সকাল সকাল মাদ্রাসায় খুশি মনে গেলো বই আনতে। কিন্তু নতুন বই না পেয়ে বিকেলে খালি হাতে বাসায় ফিরে সে কান্নাকাটি করে।”
শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে শিক্ষক মো. শাহানুর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের চাহিদা জমা দেওয়া হলেও মাদ্রাসায় শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে বই দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের হাতে অফিস থেকে সরাসরি বই বিতরণ করবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম বলেন, দাশিয়ারছড়ার মাদ্রাসাটিতে দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্ব নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলায় সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না।
মো. শামসুল আলম আরও বলেন, “ওই মাদ্রাসায় দুই ব্যক্তি সুপারিন্টেনডেন্ট পদের দাবি করে বইয়ের চাহিদা পৃথকভাবে জমা দিয়েছেন। তাদের কাছে শিক্ষার্থীদের পুরো তালিকা চাওয়া হয়েছে। গত বছর আমার কর্মকর্তা নিজে গিয়ে বই বিতরণ করেছে, এবারও করবেন।”