বৃষ্টি নির্ভর ফসল রোপা আমন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন কুমিল্লার কৃষকরা। ধানের চারার বয়স বেশি হলে ফসল উৎপাদন কম হয়। আশঙ্খা দেখা দেয় রোপা আমন আবাদে। তাই বোরো মৌসুমের মতো সেচ পাম্প চালিয়ে কুমিল্লার মাঠে রোপা আমনে সবুজের ঢেউ তুলেছেন কৃষকেরা। কুমিল্লার এক লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে এখন রোপা আমনের মাঠে সবুজ হাসি দেখা যাচ্ছে।
জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার শাকতলী, আদ্রা, হিয়াজোড়া, উরুকচাইল এলাকার তারাশাইল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে দোল খাচ্ছে সবুজ ফসল। কেউ জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউ পোকা দমনের চেষ্টা করছেন।
কৃষক নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, “এবার রোপা আমন ধান আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই মৌসুমে এত কম বৃষ্টি আর হয়নি। রোপা আমন ধান চাষ নিয়ে বেকায়দায় পড়ি। পরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অনুরোধে সেচ পাম্প মালিকরা সেচ পাম্প চালু করেন। তারা পানি দেওয়ার পর রোপা আমন ধানের চারা লাগাই। এই প্রথম সেচ দিয়ে রোপা আমন ধানের চাষ করি।”
পাম্প চালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা ২০ বছর ধরে সেচ পাম্প চালাই। সাধারণত বোরো মৌসুমে পাম্প চালাই। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ২৫০ একর জমিতে সেচ দেই।”
জেলার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, লাকসাম, লাইমাইসহ অন্যান্য উপজেলাতেও সেচ পাম্প ব্যবহার করে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে।
বুড়িচং উপজেলার নিমসার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ভুইয়া বলেন, “এবার খরার কারণে রোপা আমন লাগানো যাচ্ছিল না। তাই কৃষকদের তাগিদ দিয়ে পাম্প চালকদের উদ্বুদ্ধ করে ধান লাগানো হয়। সময় মতো আবাদ হওয়ায় ধানের ভালো ফলন পাওয়া যাবে। সঙ্গে তারা পরবর্তী ফসল সময় মতো লাগাতে পারবেন।”
বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, “বুড়িচং উপজেলায় এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমি। আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাসে ৭২ ও ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেরিতে ধান রোপন করা হলে ফসল কমে যায়। তাই উপপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় ভাদ্র মাসে আমরা মাঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ৫৩৫টি সেচ পাম্প চালানোর ব্যবস্থা করি। এতে আমরা শতভাগের বেশি জমিতে রোপা আমন ধান লাগাতে সক্ষম হই।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো.মিজানুর রহমান বলেন, “৪২ বছরের মধ্যে এবার প্রথম কুমিল্লায় বর্ষাকালে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এতে বৃষ্টিনির্ভর রোপা আমন চাষ করা যাচ্ছিল না। এবার রোপা আমন আবাদে আমাদের বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে প্রশাসন, পাম্প মালিক, কৃষক ও কৃষির মাঠ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সেচ যন্ত্র চালুর ব্যবস্থা করেছি। এতে আমাদের রোপা আমন আবাদে ব্যাঘাত ঘটেনি। এখন মাঠে ফসলের অবস্থা ভালো। আমাদের জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৩৫ হেক্টর। এই লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন করেছি।”