• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এক সপ্তাহে বন্ধ অর্ধশত হাসপাতাল-ক্লিনিক


মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ১২:৪৫ পিএম
এক সপ্তাহে বন্ধ অর্ধশত হাসপাতাল-ক্লিনিক

নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগে এক সপ্তাহে কুমিল্লা জেলায় ৪৮টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী।

ডেপুটি সিভিল সার্জন জানান, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সংশোধনের সময় দেওয়া হলেও তারা সময়মতো তাদের অনিয়ম সংশোধন করতে পারেনি বলেও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮টি হাসপাতাল এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে লাকসামে ৯টি, চান্দিনাতে ৪টি, নাঙ্গলকোটে ৩টি, বুড়িচংয়ে ২টি, হোমনাতে ২টি, মনোহরগঞ্জে ২টি, দাউদকান্দি ৯টি, সদরে ২টি, বরুড়াতে ৩টি, মেঘনাতে ২টি, দেবীদ্বারে ৪টি, লালমাইতে ২টি ও চৌদ্দগ্রামে ৫টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করতে বলা হয়েছে, তাদের প্রতি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে, যেন সম্পূর্ণ লাইসেন্স সংগ্রহ করা ছাড়া আবারও যেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা না হয়।  

অভিযানে কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয় সেগুলো হলো লাকসামের ইজি হেলথ কেয়ার, মা মনি লাইফ কেয়ার হাসপাতাল, লাকসাম সেন্ট্রাল ল্যাব, আল কারীম ডায়াগনস্টিক, আল খিদমাহ হসপিটাল, আপস জেনারেল হাসপাতাল, হাজারী মেডিকেল সার্ভিসেস, লিট হেলথ কেয়ার এবং সিগমা হেলথ কেয়ার। দাউদকান্দিতে আল মদিনা ডায়াগনস্টিক, সানল্যাব ডায়াগনস্টিক, রেনেসা ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল, স্বপ্ন ডায়াগনস্টিক, আমিরাবাদ ডায়াগনস্টিক, জনসেবা ডায়াগনস্টিক ও ফ্যামিলি-২। সদর উপজেলায় নিবেদিতা হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ফেয়ার কনসাল্টেশন ডায়াগনস্টিক। বরুড়ায় নিরাময় ডায়াগনস্টিক, সোনাইমুড়ী ডায়াগনস্টিক এবং আড্ডা টাওয়ার হাসপাতাল। নাঙ্গলকোটে ডক্টরস ল্যাব, আল নূর ডায়াগস্টিক, বাঙ্গড্ডা জেনারেল হাসপাতাল। মনোহরগঞ্জে মনোহরগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাজী আলী আরশাদ মুন্সী ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বুড়িচংয়ে শেফা ডায়াগনস্টিক এবং কংশনগর ইউনাইটেড হাসপাতাল। মেঘনা উপজেলায় জননী ডক্টরস চেম্বার ও মহসিন ডেন্টাল ক্লিনিক। হোমনায় মমতাময়ী ডায়াগনস্টিক এবং আল হেরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। চৌদ্দগ্রামের হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক, দি পপুলার ডায়াগনস্টিক, অলি আহমেদ ডায়াগনস্টিক, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক ও মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেবিদ্বারের আল আরাফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিরাপদ ডায়াগনস্টিক, আগমন ডায়াগনস্টিক, ডক্টরস ল্যাব। লালমাইতে নিলয় মেডিকেল হল ও বাগামারা ডিজিটাল সেন্টার এবং চান্দিনায় একতা ডায়াগনস্টিক, জয় ডায়াগনস্টিক, সমাধান ডায়াগনস্টিক ও নাহার ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে তাদের লাইসেন্স স্বয়ংসম্পূর্ণ না। আবার কেউ কেউ লাইসেন্সের আবেদনই করেননি। কেউ আবার অনলাইনে আবেদন করেই তাদের কাজ শেষ বলে মনে করছেন। অবহেলা করে জানতেও চাইছেন না কেন তাদের অনুমোদন দিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। অপর দিকে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক গুলো পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সের শর্ত মানছেন না। সেবা দিচ্ছেন অপর্যাপ্ত এবং অদক্ষ জনবল দিয়ে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অপরিচ্ছন্নতা এবং রোগীর প্রতি অবহেলার চিত্র প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় এবং অদক্ষদের দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রমাণও মিলেছে।

শনিবার কুমিল্লা নগরীর তেলিকোনা এলাকায় নিবেদিতা নামক একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটারের ফ্রিজে গরুর মাংস রাখা এবং একই হাসপাতালে সদ্য সার্জারি করা এক রোগীকে এক ঘণ্টার মধ্যেও পর্যবেক্ষণে আসেনি কোনো চিকিৎসক এবং নার্স। সেখানে গিয়ে একজনকেই পায় পর্যবেক্ষক দল, যিনি একাধারে ম্যানেজার, চিকিৎসক এবং নার্সের দায়িত্ব পালন করেন।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেছেন, “এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে। আমরা লাইসেন্স নিয়ে যেমন কাজ করছি, তেমনি প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও শর্ত মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।”

Link copied!