শেখ হাসিনা ক্ষমতার নেশায় শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে কিশোরগঞ্জ উচ্চ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, “আমাদের সামনে আমরা নূর হোসেনকে মারা যেতে দেখেছি। জফর, দিপালী সাহাসহ অসংখ্য শহীদের রক্তাক্ত শরীরের ওপর দিয়ে আমরা এরশাদের পতন ঘটিয়েছিলাম এই আশায়, বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচার থাকবে না। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরে আসবে। মানুষ মনের ইচ্ছায় ভোট দেবে, যে ব্যবস্থা ছিল না এরশাদের আমলে। গুন্ডা পান্ডারা এসে সিল দিয়ে যেত। শেখ হাসিনা ক্ষমতার নেশায় সেই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই উনি ধ্বংস করে দিয়েছেন। অন্য কোনো কারণে না শুধু এই কারণেই তার হাজার বছরের জেল হওয়া উচিত।”
হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, “একদিন টেলিভিশনে দেখলাম পার্লামেন্টে কোন জেলার যেন এক এমপি বক্তব্য দিচ্ছেন—‘আমি পদ্মা সেতুর কাছে গেলাম। পদ্মা সেতুর দিকে তাকিয়ে বললাম, আরে পদ্মা সেতু তুমি কী শুধু রড, সিমেন্ট আর কংক্রিটের। পদ্মা সেতু নড়েচড়ে বলল, না, না। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, ওহে পদ্মা সেতু তোমার এই আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মানের মূল ভিত্তি কী? তখন পদ্মা সেতুর সমস্ত শরীর নেচে উঠল আর চিৎকার করে বলিতে থাকল, শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা।’ হায়রে চামচা, কত রকমের চামচা। আপনাকেতো রক্ষা করতে পারল না।”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “কোথায় এখন ওবায়দুল কাদের, কোথায় শেখ হাসিনা। বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করেছিলেন। উনিতো বাড়িছাড়া, আপনিতো দেশ ছাড়া। এখন আবার অনেকে লিখে, আপা আসছে। শহীদ বিল্লাল, শহীদ রেফায়েত উল্লাহ, শহীদ আশিক, শহীদ হাসান আলী, শহীদ আবদুল্লাহর রক্ত কী কিশোরগঞ্জে শুকিয়ে গেছে? আসবেন, সব রক্তের হিসাব দিয়ে আসেন। আসার সুযোগ নাই। যারা পলিটিক্যালি ডেড। যাদের পলিটিক্যাল চ্যাপটার ক্লোজ হয়ে গেছে, তাদের আর ফিরে আসার সুযোগ নাই। পালিয়ে গেছে চোরের মতো।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “শহীদ জিয়াকে হত্যা করে যারা বলেছিল শহীদ জিয়া শেষ, বিএনপি শেষ। আজকে বলতে ইচ্ছে করে মহান নেতা তোমার সৈনিকেরা এখনো বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে। যারা বলেছিল, তোমার দল টিকবে না, বাংলাদেশের মাটি থেকে অনেকেই পালিয়ে যায় কিন্তু তোমার সৈনিকেরা পালাতে জানে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে শহীদ জিয়ার দল বিএনপিকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না।”
সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম।
এতে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোহাম্মদ ইসরাইল মিয়া।
২৭ বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে ২য় অধিবেশনে কাউন্সিলের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল মিয়া নির্বাচিত হন। পরে তাদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অতি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।