কানের কাছে মৃদু স্বরে প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলা, আর খাতায় লিখছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন।
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম (১৮) এবার লালমনিরহাট শহরের চার্চ অব গড উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। শ্রুতলিখন পদ্ধতিতে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১১২ নম্বর কক্ষে সে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলা। কানের কাছে মৃদু স্বরে নাবিলা উত্তর বলে দিচ্ছে, আর উত্তর শুনে খাতায় লিখে দিচ্ছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন। নাবিলা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তাকে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হয়েছে। উত্তরপত্র রিভিশন দিয়ে সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রের কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকের কাছে খাতা জমা দেয়।
এদিকে শ্রুতলিখনের কাজ করতে পেরে বেশ খুশি নাবিলার সহযোগিতা স্কুল ছাত্রী রহিমা খাতুন। সে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
রহিমা বলে, ‘নাবিলা আপু উত্তর বলে দেন, আমি খাতায় লিখি। আপু এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমার ভালো লাগবে।”
নাবিলা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ পরিচালিত লালমনিরহাট সদরের হাঁড়িভাঙ্গায় অবস্থিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসনকেন্দ্রে থেকে পড়াশোনা করছে।
পুনর্বাসনকেন্দ্রের কাউন্সিলর নুরবানু আক্তার বলেন, “শুধু পড়াশোনায় নয়, নাবিলা কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে।”
খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম বলে, “পাঁচ বছর বয়সে আমি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা করার পরও কোনো ফল হয়নি। এরপর থেকে আমি আরডিআরএসের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসনকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছি। আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে আমার মায়ের মতো শিক্ষকতা করতে চাই।”
লালমনিরহাট চার্চ অব গড উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদার রহমান বলেন, “দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলা পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী। এসএসসিতে তিনি ভালো ফল করবেন বলে আমরা আশাবাদী।”
নাবিলার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আইয়ুব আলী।
নাবিলার স্কুলশিক্ষক মা খন্দকার ফারজানা আফরিন বলেন, “শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আমার মেয়ের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সামনে আরও এগিয়ে যেতে চায়। নাবিলা শিক্ষক হতে চায়। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।”