চলতি রবি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে আবাদ হয়েছে ৮০ হাজার ৮৪৪ হেক্টর জমিতে। এবার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়নি। গত বছর জেলায় সরিষা আবাদ হয়েছিল ৮১ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে।
আবাদ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষি অফিস বলছে, সরিষার আবাদ কমলেও বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। সরিষার থেকে ভুট্টার দাম বেশি পাওয়াতে কৃষকরা এখন ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, চাষের জমি কমলেও উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। এখন পর্যন্ত ছত্রাক বা রোগবালাই না থাকায় এবার উচ্চ ফলন পাওয়া যাবে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৮ হাজার ২৮৫ টন। এ বছর ফলন ১ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বাড়ে। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড়ে চার-পাঁচ মণ সরিষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বীজ বপন থেকে ৮০-৮৫ দিনে ফসলটিতে তেমন সেচ দিতে হয় না। বপনের সময় মাটির নিচে সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দিলেই চলে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে কম খরচ, কম শ্রম ও দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে চাষিরা লাভ বেশি পান। ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার চাহিদা থাকলেও চলতি বছর চাষের জমি কমেছে। চলতি বছর রবি মৌসুমে ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ২৮৫ টন। তবে আবাদ হয়েছে ৮০ হাজার ৮৪৪ হেক্টর জমিতে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯ হাজার ৯৪১ হেক্টর।
জেলার ১২টি উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়। তবে সদর উপজেলা, মির্জাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, বাসাইল, দেলদুয়ার ও নাগরপুর সরিষা আবাদ বেশি হয়।
কৃষকরা জানান, খরচ কম, পরিশ্রম কম আর সময়েও কম লাগে। সরিষা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বড় বাসালিয়া গ্রামের কৃষক আবু বকর বলেন, “আমি প্রতি বছর সরিষা আবাদ করি। চলতি বছর ৬ বিঘা সরিষা আবাদ করেছি। সরিষা আবাদে আমাদের সেচ দিতে হয় না। কোনো রোগবালাই নেই তেমন কোনো পরিশ্রমও হয় না। বৃষ্টি না হলে সরিষা দ্রুত বেড়ে উঠে। গতবারের চেয়ে এবার বেশি ফলন হয়েছেন। গতবার সরিষা ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। এবার আরও বেশি আশা করছি।”
দেলদুয়ার উপজেলার টুকনীখোলা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “এবার আমি ৬০ শতাংশ জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি। আমি গত বছর প্রতি বিঘায় সাত মণ ফলন পেয়েছিলাম। প্রতি মণ সরিষা শুরুতে ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবারও তেমনটাই আশা করছি।”
দেলদুয়ার উপজেলার দেলদুয়ার পশ্চিম পাড়া গ্রামের চাষি মফিজ মিয়া বলেন, “সরিষা চাষে বিঘাপ্রতি খরচ ৬-৭ হাজার টাকা। চাষের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। গত বছর সরিষা বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। এবার তেলের দাম অনেক সে অনুযায়ী আশা করছি, সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারব।”
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার দুলাল উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার উচ্চ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার চাষের জমি কমেছে ৬৯৬ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টন সরিষা উৎপাদন হতে পারে। কৃষি অফিস কৃষকদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।