চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মুরাদপুর এলাকায় হওয়া সংঘর্ষে ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মো. ফারুক হত্যার ঘটনায় মামলা করেছে তার পরিবার। মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, রাউজানের সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ ২৬৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন নিহত ফারুকের বাবা মো. দুলাল।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত দোকান কর্মচারী মো. ফারুকের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের সৈয়দপুর গ্রামে। বিয়ের পর থেকে তিনি কুমিল্লার চান্দিনার বাতাঘাসি ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। চট্টগ্রামে ফার্নিচার দোকানে কাজ করে সচল রেখেছিলেন সংসারের চাকা। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে দোকান থেকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ভাত খাওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন তিনি। পথে আন্দোলকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারি, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, আলকরণ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মাসুম, চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, নগর যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল হক সুমন, সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
ওসি জানান, গত ১৬ আগস্ট মুরাদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে দোকান কর্মচারি ফারুক নিহতের ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে গতকাল (২৮ আগস্ট) রাতে ২৬৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ফারুক শুলকবহর এলাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। গত ১৬ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি মুরাদপুর এন মোহাম্মদ প্লাস্টিকের বিপরীত পাশে জুমাইরা বিল্ডিংয়ের সামনে যান। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর এলোপাথারিভাবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায়।
এছাড়া দা-কিরিচ, লোহার রড, চাপাতি দিয়ে আঘাতসহ শুটারগান, পিস্তল ইত্যাদি প্রাণঘাতি অস্ত্রের আঘাতে বহু ছাত্র-জনতা আহত হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলি ফারুকের বুকে, পেটে ও পায়ে লাগে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।