রাজশাহীর চারঘাটে যূথী খাতুন (১৯) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৫ নভেম্বর) চারঘাট উপজেলার মুক্তারপুর মধ্যপাড়া গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত যূথী খাতুন ওই গ্রামের সবুজ আলীর স্ত্রী এবং উপজেলার রাওথা এলাকার মুনসাদ আলীর মেয়ে। তার ১৫ মাস বয়সী এক শিশু সন্তান রয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ মাসের শিশু আয়ান কান্না করছে আর এক পা, দুই পা করে বাড়ির আশপাশে হেঁটে হেঁটে তার মাকে খুঁজছিল। ততক্ষণে তার মায়ের মরদেহ থানায় নেওয়ার জন্য ভ্যানে তোলা হয়েছে। মরদেহের পাশেই যূথীর বাবা ও স্বামীর মধ্যে দেনদরবার হচ্ছিল। অথচ শিশুটি জানেই না তার মা আর কখনো তাকে দুধ দেবে না। আদর করে কোলে তুলে নেবে না। আয়ানের দুই চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরছিল অশ্রু।
স্থানীয়রা জানান, তিন বছর আগে উপজেলার রাওথা এলাকার মুনসাদ আলীর মেয়ে যূথীকে বিয়ে করেন মুক্তারপুর মধ্যপাড়ার সবুজ। তাদের দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। মাঝেমধ্যেই তারা ঝগড়া করতেন। তবে রোববার রাতে কোনো কলহের আওয়াজ পাওয়া যায়নি। হঠাৎ ভোরে সবুজের চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, যূথীর লাশ বিছানায়, আর পাশে একটি ওড়না। শিশুটি মা মা করে কাঁদছিল। যূথী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার স্বামী দাবি করলেও টিনের চালার নিচু ঘরটিতে বিছানার ওপর ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস নেওয়া প্রায় অসম্ভব।
নিহতের স্বামী সবুজ বলেন, “স্ত্রী-সন্তানসহ একসঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি ট্রাকে পণ্য ওঠানামার কাজ করি। কঠোর পরিশ্রমের কারণে গভীর ঘুমে ছিলাম। ভোর ৩টার দিকে ছেলের কান্নার শব্দ শুনে জেগে দেখি যূথী ঘরের চালার বাঁশের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। তাৎক্ষণিক আশপাশের সবাইকে ডাকলে তারা এসে যূথীকে দেখে মারা গেছে বলে জানান।”
সবুজের বোন ফারহানা খাতুন বলেন, “যূথী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপরও মামলা না করার শর্তে তার পরিবার ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল। মরদেহ থানায় নেওয়ার আগে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। আমার ভাই দিন এনে দিন খায়, তারপরও ধারদেনা করে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে জেলে যেতে হতো।”
নিহতের বাবা মুনসাদ আলী বলেন, “আমার মেয়ে যতই কষ্টে থাকুক আমাদের কাছে কখনো প্রকাশ করত না। সে আত্মহত্যা করেনি, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।”
মেয়ে হত্যার বিচার চান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিচার করে তো আর মেয়ে ফেরত পাব না। এ জন্য মামলা করতে চাই না। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পেলে দাফনের ব্যবস্থা করব।”
চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, “মরদেহের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। প্রাথমিক অবস্থায় বিষয়টিকে আত্মহত্যা হিসেবে নিয়েছি। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হবে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ ভিন্ন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যূথীর পরিবারের অভিযোগ না থাকায় তার স্বামী সবুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”