সুনামগঞ্জ শহরের হাছননগর আবাসিক এলাকায় মা-ছেলেকে হত্যার রহস্য উদঘাটনক করেছে পুলিশ। আইফোন, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করতে গিয়ে ফরিদা বেগম ও তার ছেলে মিনহাজুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ফাহমিদ।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ডিবি পুলিশ ফাহমিদকে আটকের পর বেলা ১১টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান।
ফাহমিদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা। খুনের ঘটনার এক সপ্তাহ আগে নিহত কলেজছাত্র মিনহাজুল ইসলামের আইফোন চুরির পরিকল্পনা করে দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই ফাহমিদ ও তার বন্ধু। কিন্তু বাসায় লোকজনের উপস্থিতি বেশি থাকায় কারণে এটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ভোরে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আইফোন চুরির জন্য ফাহমিদ তার আরেক বন্ধুকে বাসার পেছনের দরজা খুলে দিয়ে তাকে বাসায় ঢুকায়। তখন মিনহাজুল ঘুমাচ্ছিল। আইফোন বিছানায় থেকে সরিয়ে নিতে গেলে জেগে ওঠে মিনহাজুল।
পরে তাদের দুজনের সঙ্গে মিনহাজের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ফাহমিদের বন্ধু রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে এসে মিনহাজুল ইসলামকে ঘাড়ে ও পিঠে দুটি কোপ দেয়। পরে মিনহাজ বিছানা থেকে মেজেতে পড়ে যায়। এঘটনা আঁচ করতে পেরে মিনহাজের মা ফরিদা বেগম এগিয়ে এলে তাকেও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর ফাহমিদ ও তার বন্ধু পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হেফাজতে আটক ফাহমিদ এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। শুরুতে তাদের একটি আইফোন চুরি ও টাকা স্বর্ণালঙ্কার লুটের উদ্দেশ্য থাকলেও মিনহাজুল ইসলাম ও তার মা ঘটনা জেনে ফেলায় তাদের নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করা বন্ধুর নাম পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি ফাহমিদ।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর ভোরে শহরের হাছননগরের পূরবী আবাসিক এলাকার হাজী এলাছবিবি মঞ্জিল বাসভবন থেকে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম (২৩) ও তার মা ফরিদা বেগম (৫৫) এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনার পরপর ফাহমিদ পলাতক ছিল।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবীরগাঁও ইউনিয়নের বসিয়াখাউড়ি গ্রামের মৃত জাহেদুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে মিনহাজুলকে নিয়ে হাছননগর এলাকায় বসবাস করতেন। মৃত জাহেদুল ইসলাম ও ফরিদা বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে আনফা বেগম বিবাহিত ও লন্ডন প্রবাসী। এঘটনার পরপর জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সিআইডি পিবিআই ও ডিবি পুলিশ ঘটনার আলামত সংগ্রহ করে।