মা কবরে, বাবা জেলে, ৩ বোনকে নিয়ে কোথায় যাবে শিশু সাজ্জাদ


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম
মা কবরে, বাবা জেলে, ৩ বোনকে নিয়ে কোথায় যাবে শিশু সাজ্জাদ

এক মাস আগে জন্ম নেয় সাজ্জাদ মোল্লার (১২) জমজ দুই বোন। তার এক সপ্তাহ পর মারা যান মা। গত সপ্তাহে রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দী হন সাজ্জাদের দিনমজুর বাবা জামাল মিয়া। সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিনপার করছে শিশু সাজ্জাদ। জমজ বোনদের মুখে দিতে পারছে না দুধও। এমন অবস্থায় তিন শিশু বোনকে নিয়ে অসহায়ত্বের মধ্যে কাটছে শিশু সাজ্জাদের জীবন।

সাজ্জাদ গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

খোঁজ নিয়ো জানা যায়, জামাল মিয়া পেশায় একজন দিনমজুর। একমাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জামাল। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালন পালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার।

এমন অবস্থার মধ্যে গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া বলেন, “আমার ভাই বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেই। একসময় সে আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল। পুলিশ কী কারণে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে তা আমাদের জানা নেই।“

মনির মিয়া আরও বলেন, “আমার ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া চিত্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়া ১ মাস বয়সী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এই দুই কন্যা সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় জামালের স্ত্রী মারা যায়। আমার বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা আমার ভাই জামালই করত। এখন জামালের চার শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।”

প্রতিবেশী কাইয়ুম মিয়া বলেন, “জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তারপরও কেন তাকে রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো? জামালের অবুঝ চার শিশু সন্তানের দায়িত্ব এখন কে নেবে? জামালকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিক। তাই এই চার শিশুসন্তান ও অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের দিকে তাকিয়ে আমারা এলাকাবাসী জামালের মুক্তির দাবি জানাই।”

জামালের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া বলে, “কয়েকদিন পরেই আমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতেও বই পড়তে পারি না। আমার স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি কে দেবে? আমার একমাস বয়সী দুই বোনের দুধের টাকা কে দেবে? আজ তিন দিন আমাদের চুলা জ্বলে না। বাড়ির আশপাশের লোকজন আমাদের খাওন দিচ্ছে, এভাবে কয়দিন চলবে? আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা আমাদের বাবাকে ফেরত চাই।”

এ বিষয়ে কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন বলে আমরা জেনেছি। গত শুক্রবার তাকে দিদার হত্যা মামলায় আটক করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পাঠানো হয়। সেখানে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।”

Link copied!