সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮টি কলেজ ও ৩৬টি মাদ্রাসা আছে। এ ছাড়া ২০টি কিন্ডারগার্টেন ও এনজিও পরিচালিত ২টি বিদ্যালয় রয়েছে।
কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ থেকে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিল করে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে তা-ও করা হয় না।
উপজেলার ধূমঘাট নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। “বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অর্থের অভাবে প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করতে পারিনি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি এলে স্কুলের মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।”
১৩৯ নম্বর হাটছালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবোতোষ মণ্ডল বলেন, শহীদ মিনার নেই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে কলাগাছের বা কাঠ দিয়ে শহীদ মিনার বানানো হয়।
হাটছালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মৌলি জান্নাতুল ফেরদাউস ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সার্থক মণ্ডল বলে, “একুশে ফেব্রুয়ারির দিন স্কুলে স্যারেরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানায়। আমরা সকালে সেখানে ফুল দেই।”
১৫৭ নম্বর ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী, শাহজাহান আলী, তৃষ্ণা মণ্ডল, ইয়াসিন হোসেন ও স্মৃতি সাহা জানায়, তাদের স্কুলের শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার না থাকায় তারা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। তাদের দাবি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। একই কথা জানিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী, কেয়া মণ্ডল, ফারহানা খাতুন ও সুনিতা রানীর।
একইভাবে দরগাপুর এন ডি এস ফাজিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাবির হোসেন জানায়, মাদ্রাসা আঙিনায় শহীদ মিনার না থাকায় তারা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে না।
নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখার্জি বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় ১৫ থেকে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাষা শহীদের ইতিহাস, তাৎপর্য ও সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার।
জোবেদা সোহরাব মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছত্তার বলেন, স্কুল আঙিনায় শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে যেতে হয়। যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটাই কষ্টের।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারাত ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, স্থানীয়ভাবে অর্থ ব্যয় করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব না। সরকারি উদ্যোগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ।