• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যমুনার গর্ভে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ১০:৪৯ এএম
যমুনার গর্ভে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ, ধুবরিয়া ও দপ্তিয়র ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম যমুনা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে গত কয়েকদিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর যমুনার পেটে চলে গিয়েছিল  পাইকশা মাইঝাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবারও সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

নদী ভাঙনে এলাকার লোকজন গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তিনটি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় তাদের বাড়িঘর ও আবাদি জমি হারাতে বসেছেন। এতে করে চরম আতংক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।

জানা যায়, গত বছর বন্যার ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবারও উপজেলার শাহজানী, আটাপাড়া, মারমা, সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, তেবাড়িয়া, ঘাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা, পাইকশা মাইঝাল, ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা, কৃষ্ণদিয়ারকুল, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ারটেক, ছিটকিবাড়িসহ দপ্তিয়রের কয়েকটি গ্রাম যমুনা নদীর প্রবল ভাঙনের মুখে পড়েছে। ফলে ওইসব এলাকার ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ  ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অতি দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে কোনো সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ঘুনিপাড়ায় আশ্রয় নেওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, “নদীতে ভিটে মাটি সব হারিয়ে আমি আজ নিঃস্ব হয়েছি। এখন পরের আশ্রয়ে রয়েছি।”

এ বিষয়ে পাইকশা মাইঝাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খানম বলেন, “গত বছর বন্যায় এ এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। সে সময় যদি ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো, তাহলে আমাদের বিদ্যালয়টি যমুনায় বিলীন হয়ে যেত না।”

খাসঘুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাগরপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদুল ইসলাম অপু বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভাঙনে প্রায় দুই হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে প্রতিবছর গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম ও স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু কয়েকদিন আগে সলিমাবাদ ভাঙন পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা ভাঙন রোধে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ তিন হাজার জিও টিউব ফেলার জন্য নির্দেশ দেন।  

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যে ভাঙন এলাকা জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। নদী ভাঙনে যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে, তাদের ঢেউটিন ও খাদ্যসামগ্রী সহায়তা করা হয়েছে। চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে বলারামপুর ও সলিমাবাদে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বন্যা শেষ হলে শুকনো মৌসুমে স্থায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে। 
 

Link copied!