কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন থেকে বিকল্প পথে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক হোটেল কর্মী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ টেকনাফে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে সাত দিন পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তা পাহারায় নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাতের জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এই রুট দিয়ে চলাচলের সময় নাফ নদের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কয়েক দফায় গুলি ছোড়া হয়। এতে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো মানুষ দ্বীপে যাওয়া-আসা করতে পারেনি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়েই বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে তিনটি ট্রলার টেকনাফ গেছে। গতকাল বুধবার রাত থেকে টেকনাফের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আবারও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরকান আর্মির যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। এতে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ রুটে ঝুঁকি বেড়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, বেলা ১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট পৌঁছায় তিনটি ট্রলার। সেখান থেকে তিনটি ট্রলার যোগে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় অন্তত দুই শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বেলা ৩টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে পৌঁছে। কিন্তু সাগরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এসব ট্রলার থেকে লোকজনকে সরাসরি তীরে ওঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। পরে কূল থেকে কয়েকটি ডিঙি নৌকা উপকূলের কিছু দূরে সাগরে অবস্থানকারী ট্রলারগুলোর কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বড় ট্রলার থেকে এসব মানুষকে ডিঙি নৌকায় তুলে তীরে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে আজ বিকেলে টেকনাফের এই ঘাট থেকে সেখানে আটকা পড়া লোকজন চারটি ট্রলারে করে সেন্টমার্টিনে গেছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে নাফ নদের ওপারে মিয়ানমার জলসীমায় যুদ্ধ জাহাজ টহল দিতে দেখা গেছে। গত দুদিন জাহাজটি নাফ নদের মোহনায় টহল দিচ্ছে।
বুধবার রাত থেকে আকাশে যুদ্ধ বিমান চক্কর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনে উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে পুলিশের একটি দলসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা ট্রলারের করে টেকনাফে ফিরছিলেন। সেসময় ট্রলারটিকে লক্ষ্য করে মিয়ানমারের ভেতর থেকে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। সেই দিনের পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে কেউ যাতায়াতের সাহস পাননি।
সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের কোনো বিকল্প পথ নেই। সেই ঘটনার পর গত ৮ জুন দুপুরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী পণ্যবাহী আরেকটি ট্রলারে ৩০-৪০টি গুলিবর্ষণ করা হয়। তাতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটির বিভিন্ন স্থানে সাতটি গুলি লাগে। এ ঘটনার পর নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েন সেন্টমার্টিনে বসবাসকারী ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।