• ঢাকা
  • রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৬

৩ মাসে শতাধিক কিশোর-কিশোরী ঘর ছেড়েছে, কারণ জানাল পুলিশ


ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ১০:০৬ এএম
৩ মাসে শতাধিক কিশোর-কিশোরী ঘর ছেড়েছে, কারণ জানাল পুলিশ
প্রতীকী ছবি

ফেনী সদর উপজেলার ভালুকিয়া গ্রামের প্রতিবেশী এক ছেলের সঙ্গে দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল স্কুলপড়ুয়া ১৪ বছরের এক কিশোরীর। ৫ এপ্রিল কিশোরী বাসা থেকে পালিয়ে ছেলেটিকে বিয়ে করে। পরে তারা ঢাকায় চলে যায়। মেয়ের মা প্রতিবেশী ছেলে ও তার মা-বাবাকে অপহরণ করেছে মর্মে পরদিনই স্থানীয় পুলিশকে অভিযোগ দেয়। অপহরণের মামলার আসামি হিসেবে ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে হাজির করা হলে আদালত ছেলেটিকে কারাগারে এবং মেয়েটি পরিবারের কাছে যেতে না চাইলে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এমনই অসম প্রেমে ফেনীতে গত তিন মাসে শতাধিক কিশোর-কিশোরী ঘর ছেড়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফেনী কোট ইন্সপেক্টর মাজহারুল করিম জানান, তিন মাসে ফেনীতে ২৭ মামলায় ১৮ জনকে কোর্টের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ও ৪ জনকে চট্টগ্রাম শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালিকা) পাঠানো হয়েছে।

ফেনী পুলিশ সুপার অফিসের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত তিন মাসে ফেনীতে ৩৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ও ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

ফেনী মডেল থানার ওসি সামসুজ্জামান জানান, রমজান মাসে (মার্চ) থানায় ২৪ জন কিশোরী ও ৭ জন কিশোরের নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছিল। তারমধ্যে ১৭ জন কিশোরী ও ৭ জন কিশোরকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কিশোরীদের মধ্যে বেশিরভাগই নিখোঁজে প্রেমঘটিত কারণ ছিল। এছাড়া বিভিন্ন মাদ্রাসা পড়ুয়া ৭ জন শিক্ষার্থীর নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছিল। তাদেরও পুলিশ উদ্ধার করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের পাঠানবাড়ি সড়কের এক কিশোরীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে শহরের একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। গত ৩০ মার্চ দুপুরে আমাদের অগোচরে মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে থানায় জিডি করলে দুই দিন পরে পুলিশ ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে। তখন জানতে পেরেছি পাশের বাসার সমবয়সী এক ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আলমগীর বলেন, সম্প্রতি এমন দুটি উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিলাম। যেখানে ফেসবুক, টিকটক ও ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলতে গিয়ে ছেলে-মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে ঘর ছাড়ার পর মেয়ের পরিবার সাধারণ ডায়েরি করলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

ওসি সামসুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনই কিশোর-কিশোরীর খোঁজে সাধারণ ডায়েরি হচ্ছে। যেখানে বেশিরভাগই প্রেমঘটিত বিষয়। যাদের প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হযে থাকে। এসব বিষয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ফেসবুক, টিকটক ব্যবহার থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে হবে।

ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, সাধারণত অপহরণের মামলা হয় মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে। মামলায় আদালত ছেলেকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং মেয়ের কাছে জানতে চান সে কোথায় যেতে চায়। যেহেতু মা–বাবার অমতে বিয়ে, তাই মেয়েরা নিজের পরিবারে ফিরতে অসম্মতি জানায়। আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে নিজের জিম্মাতেও ছেড়ে দিতে পারেন না আদালত। এ অবস্থায় মেয়েকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সূত্র: দেশ রূপান্তর

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!