• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাত মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, তবু নিয়মিত বেতন তুলছেন


নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩, ০৩:১০ পিএম
সাত মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, তবু নিয়মিত বেতন তুলছেন

নাটোরের গুরুদাসপুরের সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক সাত মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. অলিউল্লাহ ও তার স্ত্রী মোছা. আফরোজা খাতুন।

গত সাত মাসে এই শিক্ষক দম্পতি বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, সোনাবাজু উচ্চবিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সহকারী শিক্ষক (বায়োলজি) মো. অলিউল্লাহ ও সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) মোছা. আফরোজা খাতুন ভারতে চিকিৎসার জন্য সময় উল্লেখ না করে ছুটির আবেদন করেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করে স্বল্প সময়ের জন্য ছুটি মঞ্জুর করা হয়।

কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস অতিবাহিত হলেও ওই শিক্ষক দম্পতি বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। তবে সহকারী শিক্ষক অলিউল্লাহ তার পরিবর্তে স্থানীয় এক যুবককে পাঠদানের দায়িত্ব দিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে অলিউল্লা ও আফরোজা খাতুন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। সেই সঙ্গে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও ক্ষতি হচ্ছে। সাত মাস তারা উপস্থিত না থাকায় সেই বিষয়গুলোতে তেমন পাঠদান হয়নি।

বিদ্যালয়ে অলিউল্লার পরিবর্তে খণ্ডকালীন শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, “আমি পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতেই স্থানীয় বিদ্যালয়গুলোর কিছু শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াই। অলিউল্লাহ তার পরিবর্তে মাসিক ৪ হাজার টাকা চুক্তিতে আমাকে সোনাবজু উচ্চবিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে বলেন। গত সাত মাস যাবৎ আমি পাঠদান করাচ্ছি। তবে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত আমি মাত্র ৫ হাজার টাকা পেয়েছি।”

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক অলিউল্লাহ ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক আফরোজা খাতুন দেশের বাইরে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ জানান, বিদ্যালয়ে সাত মাস ধরে অনুপস্থিত দুজন সহকারী শিক্ষক স্বামী-স্ত্রী। চিকিৎসাজনিত কারণে তারা ছুটির আবেদন করেছিলেন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বলা হয়েছিল ছুটির নির্দিষ্ট কোনো সময় দেওয়া যাবে না। অতি দ্রুত অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হবে। কিন্তু গত সাত মাস যাবৎ তারা দুজন অনুপস্থিত। তবে বেতন-ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করছেন তারা। এ যাবৎ তারা প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, “অলিউল্লাহ তার পরিবর্তে একজনকে পাঠদানের জন্য স্কুলে দিয়েছে গেছেন। তিনিই আপাতত তার ক্লাসগুলো নিচ্ছেন। এ ছাড়া আফরোজা তার সহকর্মী দুই নারী শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।”

সোনাবাজু উচ্চবিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের স্বল্প সময়ের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা সাত মাসের জন্য নয়। তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

গুরুদাসপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আকতার জানান, “এমন ঘটনা জানা ছিল না। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Link copied!