বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনালে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বা এক নারী অবস্থান করছিলেন। কেউ তাকে চেনেন তাহমিনা নামে অনেকে আবার তাসলিমা নামে। কয়েকদিন ধরেই তিনি বেশ অসুস্থ।
বিষয়টি লক্ষ্য করে আদর্শ নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু রোগী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় হাসপাতালে তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। অবশেষে রূপাতলী বাসটার্মিনালে রেখে যান তারা। এমনই অভিযোগ করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
আদর্শ নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, “শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আমরা প্রথমে চেষ্টা করেছিলাম আমাদের প্রতিষ্ঠানে রাখতে। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরপর ব্যথায় কাতর হয়ে যাচ্ছিলেন। ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বৃদ্ধাশ্রমে রাখাটা সম্ভব হচ্ছিল না। এ ছাড়া ওই নারীর চিকিৎসারও দরকার। আমরা তাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগ থেকেই আমাদের ফিরিয়ে দেয়।”
তাজুল বলেন, “শেষে আমরা হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি হাসপাতালে আমাদের থাকতে বলেন এবং জরুরি বিভাগে নির্দেশনা পৌঁছে দেন ভারসাম্যহীন ওই নারীর ভর্তি নিতে এবং চিকিৎসা দিতে। পরিচালকের নির্দেশ পেয়ে আমাদের গাইনি ও মানসিক ওয়ার্ডে পাঠায়। সেখানেও ওই নারীকে থাকতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে ওসিসিতে নিয়ে গেলে সেখানেও রাখেনি। নারী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে মানসিক ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে সেখানকার ওয়ার্ডবয়রা আমাদের ফিরিয়ে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “শনিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমরা ৯ জন স্বেচ্ছাসেবী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরেছি। হাসপাতালের সব ওয়ার্ড থেকে যখন আমাদের হতাশ করে ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন নারীকে খাবার কিনে দিয়ে যেখান থেকে উদ্ধার করেছিলাম সেই রূপাতলী বাস টার্মিনালে রেখে আসি।”
তাজুল বলেন, “অসুস্থ রোগীকে কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দেয় না তা আমার দেখা প্রথম। আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। আজ রোববারও (১১ ফেব্রুয়ারি) আমি হাসপাতালে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।”
জেলা সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক এ কে এম আকতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, “অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের নেই। আমরা অসহায়দের ওষুধ, নবজাতকের দায়িত্ব নিয়ে সেবা করতে পারি। কিন্তু মানসিক ভারসাম্য অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা না দিয়ে সঠিক কাজ করেনি।”
এ ব্যাপারে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার জন্য গতকালই (শনিবার) আমি নির্দেশ দিয়েছি। যদি তাকে হাসপাতালে ভর্তি না রাখে তা অন্যায্য করেছে। আমি ঢাকা থেকে আজ ফিরছি। আগামীকাল (১২ ফেব্রুয়ারি) ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে এসে আমি নিজে থেকে ভর্তির ব্যবস্থা করব।”