দেশব্যাপী জামালপুর জেলার লিচুর সুনাম রয়েছে। এখন জেলার প্রতিটি লিচু গাছে শোভা পাচ্ছে মুকুল। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসে দোল খাচ্ছে মুকুল । দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন সুমদ্রের ঢেউ লেগেছে। গাছের প্রতিটি ডগা এখন প্রস্ফুটিত মুকুলে মুকুলে। সারাগাছে সয়লাব মুকুল সকালের স্নিগ্ধ রোদের ঝিলিক যেন সোনা ঝরে পড়ছে প্রতিটি গাছ থেকে। মুকুলের থোঁকায় থোঁকায় ডগায় বসে মৌমাছির দল ফুলের গায়ে উপড়ে পড়ছে মধু সংগ্রহের জন্য। মৌমাছিদের গুন গুন শব্দের সাথে প্রকৃতিও চারদিক মাতোয়ারা করে তুলেছে। এ যেন সত্যি অন্যরকম অনুভূতি।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ উপজেলাতে কম বেশি ব্যক্তি মালিকানাসহ অনেক জায়গায় বাগানও রয়েছে। তবে জেলার মধ্যে সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নে বেশি লিচু চাষ করা হয়। শুধু বাগান নয়, শরীফপুরে প্রতিটি বাড়িতেই দু-চারটি করে লিচুর গাছ রয়েছে। এছাড়াও সদরের ১৫টি ইউনিয়নে লিচুর চাষ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলার শ্রীরামপুর, গোদাশিমলা, রাঙ্গামাটি, শরিফপুর, জয়রামপুর, শ্যামপুর, রঘুনাথপুর, হামিদপুর, রনরামপুর ও খলিশাকুড়ি, ডেঙার, নান্দিনা, নুরুন্দি, পিয়ারপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করে আসছে। চলতি বছর গাছে গাছে যে হারে মুকুল এসেছে তাতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে পুরো গাছ ছেঁয়ে যাবে।
এছাড়া এ জেলায় স্থানীয়জাত ছাড়াও চায়না, চায়না-৩, বেদেনা, মঙ্গলবাড়ি, বোম্বাই, মাদ্রাজি, মোজাফফরী ও বেদানা জাতের প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুলে ছেঁয়ে গেছে। আর মুকুল রক্ষার্থে ইতোমধ্যে প্রতিটি লিচু গাছের গোড়ায় পানির সেচ ও স্প্রে করতে ব্যস্ত রয়েছে লিচু চাষিরা। গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পাশাপাশি মুকুল রক্ষায় ভিটামিন ও কিটনাশক প্রয়োগ করছেন। পর্যায়ক্রমে ফল রক্ষা, দানা বড় করাসহ প্রয়োজনীয় স্প্রে করাও হবে।
শরিফপুর ইউনিয়নের রাঙামাটি গ্রামের কৃষক শাহ্ আলী জানান, তার ২০টি লিচু গাছ রয়েছে। ঠিকমতো সেচ প্রদান করায় এ বছর ভালো মুকুল দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকে এ বছর ভাল ফলন পাবার আশা করছেন তিনি।
নরুন্দির নবাবপুর এলাকার লিচু চাষি আকবর হোসেন বলেন, এ বছর প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুল দেখে মনটা ভরে যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মুকুল দেখে ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে বেশি পরিমাণে অর্থ ঘরে তোলার কথাও বলেন তিনি।
সদর উপজেলার মহেশপুর কালিবাড়ী ঘুন্টি এলাকার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, লিচু গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগানিরা। ওই বাগানে একশ লিচু গাছ রয়েছে। মিন্টু মিয়া নামের এক চাষী ১০ বছর ধরে এ বাগান দেখাশোনা করেন। গত বছর ওই বাগানে রোদের কারণে লিচুর মুকুল নষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এ বছর প্রচুর পরিমান মুকুল আসার ফলে ভালো ফলনের আগাম স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, গত বছর সদর উপজেলায় দুইশ লিচুর বাগানে লিচু চাষ করা হয়েছিল। এ অঞ্চলের কৃষকরা লিচুর বাগান করে বেশি লাভবান হওয়ায় দিন দিন লিচু চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে লিচু চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”