অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে দিনাজপুরের বিরামপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এক্সপ্রেস ট্রেন।
শুক্রবার (১২ মে) দুপুরে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের ঘোড়াঘাট রেলক্রসিংয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে দুপুর ১২টা ৭ মিনিট স্টেশনের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘোড়াঘাট রেলক্রসিং থেকে ৩০০ গজ উত্তরে ট্রেনটি দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক অতিক্রম করার আগে চালক বারবার হুইসেল দিতে থাকেন। তখন ওই এলাকার গেটম্যান সাইফুজ্জামান লুডু খেলায় ব্যস্ত! ফলে রেলক্রসিংয়ের দুপাশের ব্যারিয়ার নামাতে পারেননি।
এদিকে ওই সময়ে ব্যস্ত মহাসড়কে দ্রুত গতিতে চলছিল বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা। একপর্যায়ে স্থানীয়রা ট্রেন আসছে... ট্রেন আসছে… বলে চিৎকার দিতে থাকেন। ক্রসিং থেকে আনুমানিক ২০০ গজ দূরে ট্রেনের ব্রেক চাপেন চালক মেহেদী হাসান। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান ট্রেন যাত্রী ও সড়কের দুই পাশের দ্রুতগামী গাড়িসহ পথচারীরা।
পরে স্থানীয়দের চিৎকারে ঘটনাস্থলে এসে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে রেলক্রসিংয়ের কিপিং গেইট বন্ধ করেন গেটম্যান সাইফুজ্জামান। ১২টা ১৩ মিনিটে ট্রেনটি ঘোড়াঘাট রেলক্রসিং পার হয়ে ঢাকা অভিমুখী চলে যায়। এ সময় ট্রেনের যাত্রী ও পথচারীদের ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ট্রেনের চালক মেহেদী হাসানকে স্থানীয় জনতা দূর থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা ও বাহবা জানান।
জানতে চাইলে গেটম্যান সাইফুজ্জামান বলেন, “আমি ডিউটি ঘরে বসে ছিলাম। সড়কে বাস-ট্রাকের অতিরিক্ত শব্দের কারণে ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাইনি। দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসার বিষয়ে আমাকে বিরামপুর স্টেশনের গেটম্যান কোনো মেসেজও দেননি।”
লুডু খেলার অভিযোগের বিষয়ে সাইফুজ্জামান বলেন, “ওই সময় আমি বসেছিলাম। লুডু খেলিনি। তবে সময় পেলে মাঝে মাঝে লুডু খেলি।”
স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক সামসুল ইসলাম বলেন, গেটম্যান সাইফুজ্জামান গেট থেকে সরে গিয়ে লুডু খেলছিলেন। তিনি প্রায় সময়ে দায়িত্বে অবহেলা করেন। গত তিনদিন আগেও অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস বেঁচে গেছে।
ট্রেনের লোকোমাস্টার মেহেদী হাসান বলেন, “রেলক্রসিংয়ে যাওয়ার আগে দূর থেকেই হুইসেল দিচ্ছিলাম। দূর থেকে সেখানে কোনো ক্রসিং ব্যারিয়ার দেখতে পাচ্ছিলাম না। অনেক বাস-ট্রাক চলতে দেখা যাচ্ছিল। গেটে পতাকা উড়তেও দেখা যাচ্ছিল না। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ভেবে আমি ক্রসিংয়ের সামনে ট্রেনটি থামিয়ে দিই।”
বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার (টিএলআর) মোজাম্মেল হক বলেন, “বিরামপুর স্টেশনের গেটম্যান শাহাজাহান আলী ট্রেন যাওয়ার খবরটি মোবাইলে দেওয়ার জন্য সাইফুজ্জামানকে কল দিয়েছিলেন। তাকে নাকি মোবাইলে পাওয়া যায়নি। কল না পেলেও তো সময়মতো রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাওয়ার কথা। গেটম্যান সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”