দ্বীপ জেলা ভোলায় অস্বাভাবিকভাবে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোলা সদর ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
শনিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে ভোলার মনপুরা উপজেলার ৮ গ্রাম। উপজেলার কলাতলীর চর, কাজির চর, সোনার চর, চর যতীন ও চর জ্ঞানসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় অন্তত ৫ হাজার মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি।
২৪ ঘণ্টার ১২ ঘণ্টাই পানিবন্দী থাকতে হয় এসব এলাকার মানুষের। ৬ ঘণ্টা পর পর জোয়ার এসে ডুবে যায় বিস্তীর্ণ জনপদ। বেশিরভাগ এলাকার পানি ৬ ঘণ্টা পর নেমে গেলেও কোনো কোনো এলাকায় দেখা দিচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। পানিতে ডুবে থাকা এসব চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কাঁদা আর স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ তৈরি হওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ।
মনপুরার প্লাবিত এলাকার বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল, শমিরন বেগম, কাকলি আক্তারসহ অনেকে জানান, জোয়ারের পানি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাই তারা ঘর ছেড়ে বেড়ীর ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। পানি সরে গেলে ঘরে যাবেন। সরকারী ত্রাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে মনপুরার হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, জোয়ারের পানিতে তার ইউনিয়নে বাঁধের বাইরের চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ত্রাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ভোলা-২) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, “মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঁধের বাইরে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে বাঁধ রক্ষায় ইমার্জেন্সি কাজ হাত নেওয়া হয়েছে।”
এদিকে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন এলাকার বেশ কিছু এলাকার মানুষ।
রাজাপুর ইউনিয়নের গৃহবধূ নাসরিন বেগম জানান, গত তিনদিন ধরে জোয়ারের পানি ঘরের মধ্যে চলে আসায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খেয়ে না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাচ্চারা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করছেন।
ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বলেন, “সাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে বাধেঁর বাইরের যে সমস্ত এলাকা রয়েছে সেখানে জোয়ারের পানিতে কিছুটা প্লাবিত হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটা সমীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেটার অনুমোদন হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।”