ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বসতঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা থেকে বরগুনায় রেমালের তাণ্ডব কমে আসে। এর আগে রোববার (২৬ মে) রাতে বরগুনায় এ ঝড় আঘাত হানে। এদিন ভোররাত থেকেই প্রচণ্ড ঝড়, বাতাস ও ভারী বর্ষণে জেলার সড়ক ও নৌপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ঝড় আঘাত হানা শুরু করার পর থেকে বিদ্যুতহীন রয়েছে বরগুনা। সেইসঙ্গে অনেক স্থানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবাও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ঝড় শেষে বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলে দেখা যায়, পৌরশহরসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রামই পানিতে তলিয়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের রাতে জেলার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. খাইরুল বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে রাতে প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরে ভাটা শুরু হলে পানি নেমে যায়।
বরগুনা পৌরশহরের কাঠপট্টি এলাকার স্বেচ্ছাসেবক শিমু বলেন, “সারা দিন বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সচেতনতার ক্যাম্পেইন করে বাসায় ফিরে রাতে দেখি নিজের ঘরেই পানি। ঘরে খাট অবধি ডুবে গেছে। কিছুই করতে পারিনি তার আগেই সব মালামাল ভিজে একাকার।”
বরগুনার সদর উপজেলার আয়লাপাতাকাট ইউনিয়নের মো. মজিদ মোল্লা বলেন, “রাইতে যে পানি উঠছে, তা দেইক্কা মনে ওইছে সিডরের কালেও ঘরে এইরম পানি ওডে নাই। মোর ঘর নিচু হওয়ায় ঘরের বেবাক মালামাল ভিজ্জা গ্যাছে। পরে দুহারেও পানিতে আবার ঘর তলাইয়া গেছে।”
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বরগুনার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। তাদের তথ্য মতে, ঝড়ে জেলার ১২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৩ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ জন মানুষ। এ ছাড়া ৩ হাজার ৩৭৪টি বসতঘর বিধ্বস্ত, ১৩ হাজার ৩৪টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত এবং ৪ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির মাছের ঘের ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, “আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে কাজ করছি। মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা খারাপ অবস্থায় আছে। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলছি।”