তিন বছরের আয়াত এখনো বোঝে না তার বাবা আর কোনো দিন ফিরবেন না। সে জানে তার বাবা কবরে শায়িত আছে, কাউকে সঙ্গে পেলেই বাবার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়ার তিন দিন পর ২৩ জুলাই মারা যান তুহিন আহমেদ। আয়াত তুহিন আহমেদের একমাত্র ছেলে।
তুহিন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। গত ২০ জুলাই একটি বাড়িতে কাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তুহিনকে অ্যাম্বুলেন্সে মানিকগঞ্জে নেওয়া হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে পশ্চিমপাড়া গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মঙ্গলবার শ্বশুর বুদ্ধু শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তুহিনের স্ত্রী রিয়া শয্যাশায়ী। বারবার তিনি অচেতন হয়ে পড়ছেন। পাশে বসে আয়াত মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রিয়া একটি কথাই বারবার বলছেন, “আমার স্বামী একজন রাজমিস্ত্রি। সে তো রাজনীতি করত না। তাহলে কেন তাকে গুলি করা হলো?”
তুহিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়। গত সাত বছর ধরে তিনি বাবা-মাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার পাইনাদী ছিয়াখোলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।
পাঁচ বছর আগে রিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তখন থেকে রিয়াও নারায়ণগঞ্জেই থাকছেন।
‘২০ জুলাই রাত পৌনে ৮টায় আমার ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল আসে। রিসিভ করার পরে জানতে চাইল তুহিন আহমেদ আমার স্বামী কি না? আমি হ্যাঁ বলতেই ওপাশ থেকে বলল, ‘আপনার স্বামীর তলপেটে গুলি লেগেছে।’ ওই ফোন থেকেই আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বললাম। অনুরোধ করলাম আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিতে’, বললেন রিয়া।
তুহিনকে বাঁচানোর চেষ্টায় তার কমপক্ষে পৌনে চার লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই ঋণের অর্থ কীভাবে শোধ করবেন জানেন না রিয়া। তিনি বলেন, “আমার স্বামীই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।”
রিয়ার বাবার বাড়ি থেকে গ্রামের কবরস্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ মিনিট। কাউকে সঙ্গে পেলেই আয়াত বায়না ধরে বাবার কাছে যাবে সে।