তিন মাস পরপর কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। প্রতিবারই সেখানে পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকাসহ স্বর্ণালংকার, বিদেশি মুদ্রা। তবে এবার পাওয়া গেছে একটি চিঠি। ওই চিঠিতে মেলে এক ঋণগ্রস্ত বাবার বেকার সন্তানের আকুতি।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ৯টি দানবাক্সে তালা খোলা হলে এক বাক্সে ১০০ টাকার নোটের সঙ্গে পিন করা ওই চিঠির দেখা মেলে।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আতিক নামের এক ব্যক্তি ওই চিঠি দেন।
চিঠিতে আতিক লেখেন, তার বাবা বিশাল অঙ্কের ব্যাংকঋণ ও সুদে টাকা নেওয়ায় মানসিকভাবে জর্জরিত। বর্তমানে মহাজনদের চাপে তাদের বসবাস করাই দায় হয়ে উঠছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পাগলা মাসজিদে ১০০ টাকা দান করেছেন। একই সঙ্গে একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির প্রত্যাশা তার।
আতিক তার চিঠিতে আরও জানান, বাকি জীবন তিনি তার বাবা-মায়ের সেবা করে কাটাতে চান।
যা লেখা ছিল আতিকের চিঠিতে:
“হে মহান আল্লাহ পাক, আমার প্রিয় সাধক পাগলা বাবার মসজিদের খ্যাতি শুনে দূরের জেলা পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে একাই এসেছি। আপনি অন্তর্যামী। সবই দেখেন ও জানেন। আমার বাবা মো. কুদ্দুসুর রহমান, মা উম্মে কুলসুম, বোন আফিফা রহমান। আমি মো. আতিকুর রহমান। আমার বাবার ব্যাংক লোন ১৬ লাখ টাকার ওপরে। ব্যক্তিগত সুদের ঋণ ১০ লাখ টাকার ওপরে। সুদখোরদের অত্যাচারে বাসায় থাকা বা চাকরি, পড়ালেখায় মন দেওয়া খুবই কঠিন। আমার বাবা অসহায় একজন মানুষ। নিজে ঋণ করে তার বোনদের ভাইদের পড়াশোনা ও বিয়ের খরচ চালিয়েছে। এখন তাকে সাহায্য করার কেউ নেই আল্লাহ তুমি ব্যতীত। পাগলা মসজিদে মাত্র ১০০ টাকা দান করলাম। আল্লাহ ও আল্লাহ রাসুলের অসিলায় ও পাগলা বাবার অসিলায় ঋণ ও গজব থেকে মুক্তির সুযোগ দাও। আমাকে প্রথম শ্রেণির সরকারি একটি চাকরি দাও। মা-বাবার খেদমত করার সুযোগ দাও। আমাদের বালা মুসিবত পাগলা বাবার অসিলায় দূর করে দাও। ইতি আতিক, গলাচিপা, পটুয়াখালী”
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়। সেখানে ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছে। গণনা শেষে টাকার অঙ্ক ছাড়িয়ে যায় বিগত দিনের সব রেকর্ড। এবার ৩ মাস ২০ দিন পর দানবাক্সে মেলে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এতে প্রায় ২২০ জনের একটি দল অংশ নেয়।
এর আগে, ১৯ আগস্ট মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল।