মমিনুল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভিটেমাটি বিক্রির টাকায় চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক হতে পারেননি। সব হারিয়ে শুরু হয় পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ। দিনের বেলা দিনমজুরি আর রাত কাটত ভাড়া বাড়িতে। একদিকে সংসারের ভরণপোষণ, অন্যদিকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে তার জন্য। এ কারণে পরিবার নিয়ে ঠাঁই নেন রেলস্টেশনের পাশের এক ঝুপড়ি ঘরে। বেঁচে থাকা যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছিল সেখানে নিজের জমি আর পাকা ঘর যেন মমিনুলের কাছে কেবলই স্বপ্ন।
কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেছে মমিনুলের জীবনের গল্প। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ভৈলাতর সরকারি আশ্রয়ণে ২ শতক জমিতে দুটি পাকা ঘর পেয়েছেন মমিনুল। নিজের নামে জমি ও ঘর পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন মমিনুল ও তার পরিবার।
বুধবার (৯ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হল ঠাকুরগাঁও। ২০২২ সালের ২১ জুলাই জেলার বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ হরিপুর উপজেলা ও ৯ আগস্ট সদর পীরগঞ্জ রাণীশংকৈল উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে পুরো জেলাকেও ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। জেলায় ৮১৮৭ টি পরিবারের মাঝে চার পর্যায়ে দেওয়া হয় সরকারি আশ্রয়ণের ঘর।
মমিনুল বলেন, “আগে পাখির মত ঘুরে বেড়াতাম, মাথা গোজার ঠাই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও জমি পেয়ে আমার স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে।”
মমিনুলের স্ত্রী বলেন, “ঘর পেয়ে কষ্ট দূর হবার পাশাপাশি চিন্তা মুক্ত হয়েছি।”
আশ্রয়ণে বাসিন্দারা জানান, সমাজের ছিন্নমূল মানুষের মাথা গোজার ঠাই হয়েছে। নিজের নামে জমি আর পাকা ঘর পাওয়ায় বদলে গেছে আশ্রয়ণে থাকা মানুষের জীবন। এমন উপহারে খুশির পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুণাংশু দত্ত টিটো বলেন, “ঠাকুরগাঁও জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন।”
জেলার পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, “ফাঁকা জায়গায় অনেক আশ্রয়ণের ঘর থাকায় সেগুলোতে যেন কোনো অসাধু চক্র গড়ে উঠতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।”
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, “আশ্রয়ণে বসবাস করা মানুষদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।”