কৃষি নির্ভর গাইবান্ধা জেলায় বেসরকারিভাবে স্থাপিত হিমাগার রয়েছে মাত্র পাঁচটি। প্রয়োজনের তুলনায় কম হিমাগার থাকায় কৃষিপণ্য রাখতে গিয়ে তাই জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনকি হিমাগারের অভাবে প্রচুর পরিমাণে সবজি নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় তিনটি, সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাটে ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনড্ঙ্গায় একটি করে হিমাগার রয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ি উপজেলায় কোনো হিমাগার না থাকায় চরম বিপাকে রয়েছেন চাষিরা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিমাদ্রি লিমিটেড, গোবিন্দগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ-১ (বকচর) ও গোবিন্দগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ-২ (সুর্যগাড়ী), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায় আশরাফ সিড স্টোর অ্যান্ড হিমাগার এবং সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপের হাটের আরডি কোল্ড স্টোরেজ নামের এই পাঁচ হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের মোট ধারণ ক্ষমতা ৪৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। গাইবান্ধার সাত উপজেলায় গোল আলু উৎপাদন হয় প্রায় ৭২ লাখ মেট্রিক টন।
এই হিমাগারগুলো তিন দশক আগে স্থাপিত হলেও পরবর্তী সময়ে জেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো হিমাগার স্থাপিত হয়নি। এ কারণে গাইবান্ধা জেলার আলু, পেঁয়াজ, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, আদা, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি উৎপাদন করেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার চাষি আরিফ হোসেন বলেন, সবজি চাষ করে সংসার চললেও বেশিরভাগ সময় ক্ষতি গুণতে হয়। ব্যাপক ফলন হলেও কমমূল্য সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। যদি, হিমাগারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করে পরে ন্যায্যমূল্যে মূল্যে বিক্রি করা যেতো।
সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি চরের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চরে ব্যাপক মরিচ চাষাবাদ হয়। বর্তমানে কাঁচা মরিচ ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যদি স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই উপকৃত হতো।
সাঘাটা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন সরকার বলেন, “আমরা বগুড়া ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ধরণের কাঁচামাল কিনে খুচরা ও পাইকারি হিসেবে বিক্রি করি। কিন্তু বিক্রি না হলে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে যদি হিমাগার স্থাপন করা যেতো তাহলে সবজি বা অন্যান্য পণ্য নষ্ট হতো না।”
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী প্রধান এম আব্দুস সালাম বলেন, চাষিদের বড় সমস্যা হচ্ছে পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নদীর তীরবর্তী স্থানে হিমাগার স্থাপন করা দরকার। তাহলে চাষিদের ক্ষতি কম হবে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জেলার পাঁচটি হিমাগারে শুধুমাত্র গোল আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। জেলায় মোট উৎপাদনের ১৫-১৬ শতাংশ আলু পচে নষ্ট হয় হিমাগার না থাকায়। হিমাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি হয়।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, “চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন ধরণের সবজি ও নানা ধরণের শস্য উৎপাদন হলেও হিমাগারগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সবজি ও ফলমূল রাখার ব্যবস্থা নেই। এ কারণে মৌসুম ভিত্তিক সবজি ও ফলমূল রাখা যায় এমন হিমাগার স্থাপনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।”
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, গাইবান্ধা জেলায় এখন সব ধরণের খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মরিচ, বাদাম, ভুট্টা, বেগুন, পেঁয়াজ, ডাল ও মশলা জাতীয় খাদ্য অধিক উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদন বিবেচনায় হিমাগার ও সংরক্ষণাগার স্থাপন জরুরি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলা হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় দুটি হিমাগার স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।