• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শ্রম বিক্রির হাটে মিলছে না শ্রমিক


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম
শ্রম বিক্রির হাটে মিলছে না শ্রমিক
জনের হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা কয়েকজন শ্রমিক। ছবি : প্রতিনিধি

চলছে ধান লাগানো ও পাট কাটার মৌসুম। এ অবস্থায় শ্রমিক সংকটে পড়েছেন ফরিদপুরের কৃষকরা। গত কয়েকদিনে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ফরিদপুরের শ্রম বিক্রির হাটে শ্রমিক কমেছে কয়েক গুণ। দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা বেশিতেও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক।

জেলার পশ্চিম গোয়ালচামট এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উত্তর পাশে ৩০ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত হাটটির নাম দেওয়া হয়েছে মিজান নগর কৃষাণ হাট। স্থানীয়দের কাছে ‘জনের হাট’ নামেই বেশি পরিচিত এই হাটটি। মূলত ফসল রোপণ ও কাটার সময় এই অঞ্চলে শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকে। সেই প্রয়োজন থেকেই এই হাটটি গড়ে ওঠে।

হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে পাট কাটা ও রোয়া ধান লাগানোর মৌসুম হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে এখানে ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের কারফিউ ও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রৌদ্রজ্জল পুরো জনের হাটের খাঁ খাঁ অবস্থা। অন্যান্য সময় যেখানে দেড় দুই হাজার মানুষের আনাগোনা থাকত, সেখানে হাতে গোনা দেড় দুইশো মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে। এদের অনেকেই কারফিউয়ের আগে কাজে গিয়েছিলেন। তবে কাজ শেষ হলেও যানবাহন না চলায় তারা হাটে ফিরে আসতে পারেননি। ওই কয়দিন গৃহস্থের বাড়িতেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আবার নতুন করে বিক্রি হওয়ার জন্যও এসেছেন কিছু শ্রমিক। তারা বয়সে তরুণ হওয়ায় বাজারে তাদের চাহিদা কম।

ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রাম থেকে চারজন শ্রমিক নিতে এসেছিলেন ফিরোজ মিয়া (৪৫)। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “পাট কাটার জন্য শ্রমিক দরকার বলে আইছিলাম। সারা হাট ঘুইরা মাত্র দুইজন শ্রমিক পছন্দ হইলো। তাগড়া (তরুণ) শ্রমিকরা কাজে ফাঁকি দেয় বইলা নেই নাই। হাটে তেমন শ্রমিকই নাই আর বয়সী শ্রমিক তো আরও নাই।“

রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকা থেকে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন মাহিদুর মিয়া (৩১)। তিনি বলেন, “১০ দিন আগে কাজে গেছিলাম রাজবাড়ী সদরের একটা গ্রামে। সেখানে মাত্র ছয় দিনের কাম ছিল। পরে হুরোহুরি লাইগা যাওয়ায় মালিকের বাড়িতেই খাইছি। বাস খোলার পর বুধবার (২৪ জুলাই) আবার এই হাটে আইছি।“

মাহিদুর বলেন, “ছয় দিনে যা কামাই করছি তার মধ্যে মাত্র ৮০০ টাকা বাড়িতে পাঠাইছি। এখন হাতেও তেমন টাকা নাই। নতুন কইরা আমার কোথাও কাম জুটলে সেখানে যাইতে হবে। খালি হাতে তো আর বাড়ি যাওয়া যায় না।“

হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই হাটে বেশিরভাগ শ্রমিক আসেন ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলা থেকে। এসব শ্রমিকদের কিনে নেন ফরিদপুরসহ আশপাশের মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুরের কৃষকরা।

এই হাটে শ্রমিক বিক্রির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট। এসব দোকানে নাস্তা, দুপুরের খাবার, পুরোনো জামা-কাপড়, কৃষি কাজের কাচি, দা, খোন্তা, নিড়ানিসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম বিক্রি হয়। সেখানে কয়েকটি সেলুনও গড়ে উঠেছে। তবে বর্তমানে মানুষজন কম থাকায় ওইসব দোকানগুলো প্রায় ক্রেতাশুন্য অবস্থায় রয়েছে।

হাটটি পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবু শেখ (৪১)। শ্রমিক বিক্রি হয়ে গেলে প্রতিজন শ্রমিকের কাছ থেকে ১০ টাকা করে নেন তিনি।

বাবু শেখ সংবাদ প্রকাশকে জানান, বর্তমানে হাটে শ্রমিকের সংকট রয়েছে। অন্যান্য বছর পাট কাটার এই মৌসুমে হাটে এক হাজার পাঁচশত থেকে ছয়শত শ্রমিক থাকে। এবার আছে মাত্র দেড় থেকে দুইশর মতো। এ জন্য বাধ্য হয়ে মানুষ পাঁচশ টাকার শ্রমিক সাতশো থেকে সাড়ে সাতশ টাকায় কিনে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক গৃহস্থ শ্রমিক না পেয়ে বাড়িতে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

Link copied!