পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে দালালের মাধ্যমে প্রবাসে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কবির হোসেন।
সোমবার (৩ মার্চ) উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরকিশোরগঞ্জ গ্রামে নিজ বাড়িতে তার মরদেহ আনা হয়। এসময় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
নিহতের স্ত্রী কোহিনূর বেগম জানান, তার স্বামী দেশে ব্যবসা করত, কিন্ত ব্যবসার অবস্থা ভালো ছিল না। এ কারণে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে সে তুরস্ক যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ীর কাইজ এলাকার জাহিদ (৪৫) ও তার বন্ধু কালাম হোসেন মান্নান (৫৫) নামে দুই আদম ব্যবসায়ী তাকে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে তুরস্ক নেওয়ার কথা বলে গত ৮ মাস পূর্বে উজবেকিস্তানে নিয়ে ছেড়ে দেয়। সেখানে দিনের পর দিন কোনো খোঁজ খবর না নিয়ে ফেলে রাখে এবং তুরস্ক নেওয়ার কথা বললে টালবাহানা করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ফোন করে তার অবস্থা অনেক খারাপ বলে পরিবারকে জানায়।
কোহিনূর বেগম বলেন, “আমার স্বামীর অবস্থা খারাপ বলে দালালদের জানানো হলে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে পুনরায় ৮০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু গত ১৩ জানুয়ারি কবির হোসেন মারা গেছে বলে আমরা জানতে পারি। মরদেহ ফেরত পাওয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলে উল্টো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বিভিন্নভাবে মামলার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে দালালরা।“
এ ঘটনায় কহিনুর বেগম বাদী হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে সোনারগাঁ থানায় দু’জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত তো দূরের কথা ফোনেও তাদের সঙ্গে কথা বলেনি বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
নিহতের ফুফাতো ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, “কবির হোসেনের দুই ছেলে, তিন মেয়ে। ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ গিয়েছিল। কে জানতে তার এ পরিণতি হবে। তার দু’ চালা ঘরের দরজা পর্যন্ত নাই। পুরানো কাপড় ঘরের দরজা হিসেবে ব্যবহার করে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভ করে পরিচয় জানার পর মোবাইল বন্ধ করে দেন।
সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় কুমার বসাককে একাধিকবার ফোন দেওয়ার হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খাঁন বলেন, “অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। কী কারণে এসআই ঘটনাস্থলে যাননি এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইমাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”