কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পাট চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। গত দুই মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেলেও, এবার কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৬ থেকে ৭ মণ। বর্তমানে এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৯০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘায় লোকসান হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
জেলার কৃষি অফিস ও মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছর ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। জেলায় এ বছর পাট চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৩৬ একর কম।
কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার এক বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরি, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়াসহ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ৬ মণ। ১৭০০ টাকা দরে ৬ মণ পাট বিক্রি করে ১০ হাজার ২০০ টাকা পেয়েছি। আমার ৬ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। গত বছরের তুলনায়ে পাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।”
পাট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “গত বছরের কেনা পাট আজও গোডাউনে ভরা। অনেক ব্যবসায়ী গত বছরের পাট বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছেন না। পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই বিপাকে পড়েছেন। কৃষকদের লোকসান হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না তারা। গত বছর এ সময় পাটের দাম ছিল প্রতিমণ ২৫০০ টাকা, এ বছর প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।”
এ বিষয়ে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, “এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছে। পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।”
জেলার মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “গত মৌসুমে প্রতিমণ পাটের দাম ছিল ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা। গত বছরের পাট ব্যবসায়ীরা এখনও বিক্রি করতে পারেননি। ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাট ক্রয়ে তাদের আগ্রহ কম। বিভিন্ন কারণে এ বছর পাটের গুণগত মানও তুলনামূলক কম।”