কৃষিতে ব্যবহৃত সেচ পাম্পের পাওয়ার ডিভাইস উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শিমসন সাহা শিমু নামের এক উদ্ভাবক। এর নাম দিয়েছেন তিনি জাদুর বাক্স। ৪ হর্স পাওয়ারের ছোট একটি শ্যালো মেশিন ও ৩ ইঞ্চি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে যেখানে ৫ লিটার পানি উত্তোলন করা যায়, সেখানে এই পাওয়ার ডিভাইসটি একই মেশিন ও পাম্পের সঙ্গে জুড়ে দিলে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ লিটার পানি উত্তোলন করা সম্ভব। এতে সময়ের পাশাপাশি ৭০ শতাংশ জ্বালানি তেল সাশ্রয়ী হবে। যার প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ও অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) পরীক্ষায়। মিলেছে সনদও।
শিমুর বাড়ি কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেল বাড়ি গ্রামে। এলাকার একটি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে আর বেশি দূর এগোতে পারেননি শিমু। কাজ শুরু করেন একটি মেশিনারিজ কারখানায়। সেখান থেকে রপ্ত করেন বিভিন্ন মেশিন মেরামতের কাজ। ১৯৯৭ সালে নিজ গ্রামে এসে শুরু করেন নষ্ট শ্যালো মেশিন মেরামত ও ইরি ধানের ব্লকে সেচ দেওয়ার কাজ।
দীর্ঘ আট বছরের চেষ্টা ও পরিশ্রমে তৈরি করে ফেলেন এই মেকানিক্যাল পাওয়ার ডিভাইসটি, যা যেকোনো সেচ পাম্পের সঙ্গে জুড়ে দিলে ৭০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ডিভাইসটি তৈরি করে সে বছরই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষিতে অবদান রাখায় পুরস্কার পান তিনি। এরপর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে আবেদন করেন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটুআই ও বুয়েট পরীক্ষায় পাঠানো হয় তার উদ্ভাবিত ডিভাইসটি। পরীক্ষায় ডিভাইসটির কার্যকরিতার প্রমাণ মেলে। এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট বিভাগ এই মেকানিক্যাল পাওয়ার ডিভাইসটির অনুমোদন ও শিমসন সাহাকে উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুদান মঞ্জুর হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট শেষ হওয়ায় পরের বছরে তাকে অনুদান দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে শিমুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “একটি ৪ হর্সের শ্যালো মেশিনের সঙ্গে ৩ ইঞ্চির একটি পাম্পে মাটির দশ ফুট গভীর থেকে পানি তুলবে ০.২৫ কিউসেক। একই মেশিন ও পাম্পের সঙ্গে এই ডিভাইসটি জুড়ে দিলে পানি তুলবে ১.০৬ কিউসেক। ডিভাইসটি ৭০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী বলে বুয়েট ও এটুআইয়ের পরীক্ষায় এসেছে। তারা আমাকে সনদও প্রদান করেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট বিভাগ এই মেকানিক্যাল পাওয়ার ডিভাইসটির অনুমোদন ও আমাকে একজন উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে অর্থের অভাবে আমার এই আবিষ্কার থমকে আছে।”
একই এলাকার রহিম মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, “এই বাক্সটা মাঝেমধ্যে শিমু দাদার কাছ থেকে নিয়ে আমরা সেচ পাম্পে ব্যবহার করি। তাতে আমাদের অনেক জ্বালানি তেল সাশ্রয়ী হয়। এটি সরকারি অর্থায়নে উৎপাদন করলে এবং সেটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিলে কৃষকেরা অনেকটা উপকৃত হবে। ফসল উৎপাদন খরচ ও সময় দুটি বাঁচবে।”
গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আ. কাদের বলেন, এই ডিভাইসটি সেচ পাম্পে ব্যবহৃত হলে ফসল উৎপাদন খরচের পাশাপাশি কৃষকের সময় বেঁচে যাবে। যেখানে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ফলে সময় লাগবে ২৫ মিনিট। পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে ৭০ শতাংশ।