• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাস্তার কাজে অনিয়ম : প্রকৌশলী বললেন ‘তোরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কী বুঝস’


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
রাস্তার কাজে অনিয়ম : প্রকৌশলী বললেন ‘তোরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কী বুঝস’

‘আমার মন্ত্রী, সচিব আছে, জেলা এক্সেন (এলজিইডি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী) আমার গোনা লাগে না। বোঝোস নাই বেপারটা, তোরা কারা? তোদের পড়াশোনার যোগ্যতা কী? গেট লস্ট।’—শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা রাস্তার কাজে অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এভাবেই সাংবাদিকদের শাসিয়ে কথাগুলো বলেন উপজেলা প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে ডামুড্যা উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় এলজিইডির একটি রাস্তার কার্পেটিংয়ের চলমান কাজের অনিয়মের তথ্য সংগ্রহকালে এমন কাণ্ড করে বসেন ওই উপজেলা প্রকৌশলী।

সাংবাদিকরা জানান, ডামুড্যা উপজেলার খেজুরতলা নামক স্থানে রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজে নিন্মমানের ও পুরোনো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে সমকাল, বাংলা টিভি ও ডেইলি স্টারের প্রতিনিধিসহ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী সংবাদ সংগ্রহ করতে যান।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার কার্পেটিংয়ের জন্য বালু, ডাস্ট, ও পাথরের সমন্বয়ে মেশিনের মাধ্যমে বিটুমিন মেলানো হচ্ছে। এই মেশিনের পাশে রাখা হয়েছে রাস্তা থেকে তুলে আনা পুরোনো কার্পেটিংয়ের পাথর এবং পশ্চিম পাশে রাখা হয়েছে পুরোনো ভাঙা সেতুর পাথর।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপে যান প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ। চড়াও হয়ে তিনি বলেন, “তোরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কী বুঝস, তোরা কারা? তোদের পরাশোনার যোগ্যতা কী, গেট লস্ট।” এসময় সমকালের সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, এভাবে কেন কথা বলছেন, আর আপনি গেট লস্ট বলার কে। এই কথা বলার পরে সোহাগ খানকে ধাক্কা দেন প্রকৌশলী নাবিল আহমেদ।

সমকালের প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজন অভিযোগ করে বলেন, “রাস্তার কাজে অনিয়ম হচ্ছে এমন সংবাদে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যাই। আমরা সেখানে বেশকিছু পুরোনো পাথর ভাঙা দেখতে পেলে উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করি। এরপরই তিনি আমাদের ওপর চড়াও হন এবং একপর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করেন।”

দৈনিক ডেইলি স্টারের জাহিদ হাসান রনি বলেন, “পুরোনো কার্পেটিংয়ের কিছু অংশ মিলিয়ে তারা নতুন রাস্তা করছিলেন। আমরা জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিল আমাদের ‘গেট লস্ট’ বলেন। আমরা পাল্টা প্রশ্ন করলে গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন। তিনি আমাদের পড়াশোনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেন এবং বলেন ‘গেট লস্ট’।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিল বলেন, “তারা (সাংবাদিকরা) পুরোনো মালামাল আর নতুন মালামাল মিলিয়ে ভিডিও করছিল। তারা কেন এটা করবে? তাদের আমি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করিনি। তারাই আমাকে লাঞ্ছিত করেছে।”

জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাফেউল ইসলাম বলেন, “কার্পেটিংয়ে পুরোনো মালামাল নতুন করে বিটুমিনে মেলানোর সুযোগ নেই। রাস্তার পুরোনো কার্পেটিং ওঠানোর পর রোলার দিয়ে তা রাস্তাতেই মিলিয়ে ফেলতে হবে। এটা পাশেও রাখা যাবে না।”

গণমাধ্যমকর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি তার সঙ্গে (উপজেলা প্রকৌশলী) কথা বলব। তিনি যদি দোষী হয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ব্যাপারে ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরীন বেগম সেতু বলেন, “বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। তিনি কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের ব্যবহার করেছেন, তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হবে।”

Link copied!