‘বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলকাতা প্রবেশ করতেই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে পাসপোর্ট। তারপর সেখানকার চ্যানেলের প্রতিবেদকদের শিখিয়ে দেওয়া কথামতো সাক্ষাৎকার না দিলে পাসপোর্ট দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপর সেই সব বাংলাদেশি নাগরিকদের মুখ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের নানা কল্পকাহিনী বানিয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
এমন অভিযোগ করেছেন ফরিদপুরের শহরের নীলটুলীর স্বর্ণকার পট্টির নিউ গিনি ভবন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী সুনীল কর্মকার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের দুটি চ্যানেলে প্রপাগান্ডার ছড়ানো হয়। ভারতের এবিপি আনন্দ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দেন সুনীল কর্মকারের ছেলে শুভ কর্মকার।
ওই সাক্ষাৎকারে শুভ দাবি করেন, “বাংলাদেশে খুবই খারাপ অবস্থা। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। মন্দির-প্রাসাদ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য খারাপ লাগে। তাদের মারধর করা করা হচ্ছে। মা বোনদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতে দোকান থেকে বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবতে হয় সকালে দোকানের উদ্দেশে আবার বের হতে পারবো কি না।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভ কর্মকারের এই বক্তব্য জানাজানি হলে ফরিদপুরে নিন্দার ঝড় ওঠে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা সরেজমিনে বিষয়টি জানতে শুভর বাবা সুনীল কর্মকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে সন্তানের মুখে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর এই ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে বিস্মিত শুভর বাবা-মা। এ ঘটনায় ছেলে এই কাণ্ডে তারা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
শুভর মা মিসেস সুনীল বলেন, “আমরা আমাদের ছেলের এই কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক দুঃখিত ও ক্ষমা চাইছি। আমরা কখনোই এই দেশে কোনো নির্যাতনের শিকার হইনি। আমার মেয়েরা, ভাসুরের মেয়েরা তারাও কখনো এ ধরনের হামলার শিকার হয়নি। ভারতের ওই সাংবাদিকেরা খারাপ। তারা ইচ্ছা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বাংলাদেশে খুবই নিরাপদে রয়েছি।”
শুভর বাবা সুনীল কর্মকার বলেন, “ওর (শুভ) এই কথা শুনে আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে গেছি। ও কী করে এই কথা বলল ভাবতেও পারছি না। আমরা দেশে কোনো ধরনের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হইনি। আমি ওকে ফোন করেছিলাম ওর এই কখা শুনে। ও বলল, পেট্রাপোলে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পরে সেখানকার সাংবাদিকেরা ওর পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপর ওদের শিখিয়ে দেওয়া কথা না বললে পাসপোর্ট দেবে না বলে ভয় দেখায়।”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশ্যেই ওই দেশের সাংবাদিকরা এমনটি করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে, দ্য ওয়াল নামে আরেকটি চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকারে এক তরুণী দাবি করেছেন, তিনি বাংলাদেশে নির্যাতিত হয়ে দুই মাস যাবৎ কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন। ওই তরুণীর নাম অমিয় সরকার। তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।
জানা গেছে, অমিয় সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ৮ নং সহ-সভাপতি ছিলেন। পরের বছর অনুমোদিত কমিটি হতে তাকে বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য তার আগেই এই অমিয় সরকারের নাম ছড়িয়ে যায় খন্দকার মোশাররফ জামানার হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হিসেবে। এই অমিয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলার অন্যতম আসামি।