শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও দৃষ্টিনন্দন কাশবন যেন জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের থাকে নানা প্রস্তুতি। দুর্গাপূজার প্রধান উপজিব্য হলো প্রতিমা। তাই দেবীর আগমনকে ঘিরে মণ্ডপ ও মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে কর্ম ব্যস্ততা। বসে নেই মালিপাড়ার প্রতিমা শিল্পীরাও।
জেলার রাজারহাটরর বৈদ্যের বাজার, সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি, দাশেরহাট, ঘোগাদহসহ একাধিক এলাকায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। ইতোমধ্যে লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, কার্তিক, ময়ূর, পেঁচা সবকিছু তৈরি প্রায় শেষ। তবে মূল প্রতিমা দেবী দুর্গার কাজ এখনো বাকি রয়েছে।
প্রতিমা তৈরির শিল্পালয়গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ। কারও যেন কথা বলার সময় নেই। বাঁশ, কাঠ, খর আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সবাই। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেগুলো শুকানোর পর দেওয়া হবে রং তুলির আঁচড়, সাজানো হবে বিভিন্ন অলংকারে।
ঘোগাদহ ইউনিয়নের সোবনদহ গ্রামের কারিগর শ্রী গণেশ মালাকর বলেন, “প্রতিমা তৈরির খড়, বাঁশ, কাঠ, রং, সুতাসহ সব সরঞ্জামের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তবুও আশা করছি এবার প্রতিমার সঠিক দাম পাব।”
রাজারহাটের বৈদ্যের বাজারের প্রতিমা কারিগর তপন চন্দ্র মালাকার বলেন, “বংশপরম্পরার পেশা ছাড়তেও পারি না। কোনো মতে আঁকড়ে ধরে আছি। মহালয়ার আগে প্রতিমা রেডি করতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।”
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর ৫০০টির মতো মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয়া দুর্গোৎসব। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা।
কুড়িগ্রাম হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহদপ্তর সম্পাদক সুজন মোহন্ত বলেন, “সারা দেশে যেভাবে মাজার ভেঙে ফেলা হচ্ছে, ঠাকুরগাওয়ে উড়ো চিঠি দিয়ে পূজো করার জন্য চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এদিক থেকে পূজা উদযাপন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আর ভীতি কাজ করছে। তবে প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আশা করি সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই পালন করতে পারব।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী রবি বোস বলেন, “এ বছর জেলায় মোট পূজামণ্ডপের সংখ্যা প্রায় ৫০০টি। ইতোমধ্যে আমরা মণ্ডপগুলোর কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি নিবিঘ্নে পূজা সমপন্ন হবে।”
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এ কে এম ওহিদুন্নবী বলেন, “আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা প্রতিমা কারিগরদের স্থানগুলোতে নিরাপত্তা টহল জোরদার করেছি। কেউ যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা গুজব ছড়াতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”