শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় এক কাপড়ের দোকানীকে তুলে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মডেরহাট বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছোট একটি দোকানে কাপড়ের ব্যবসা করে আাসছেন চর ধানকাটি এলাকার সোলাইমান ফরাজী। গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক।
এসময় তিনি সোলাইমান ফরাজীর কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স চাইলে তিনি প্রথমে ফটোকপি ও পরবর্তীতে মূল কপি দেখান। এরপর তার কাছে আয়কর সার্টিফিকেট চাইলে সেটি তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে ক্ষুদ্র দোকানী হওয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সোলাইমান ফরাজীর সঙ্গে কথার কাটাকাটি হয় এসিল্যান্ড আবু বকর সিদ্দিকের।
একপর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার সদস্যকে দিয়ে সোলাইমান ফরাজীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখান আটকে রেখে প্রথমে তাকে কানেধরে উঠবস করান। এরপর আনসার সদস্য ও তিনি নিজে লাঠি দিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন সোলাইমান। পরে খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ঘটনাস্থলে গেলে তাদের অনুরোধে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন।
এ ঘটনায় সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সোলাইমান ফরাজী।
এমন ঘটনায় কর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা খবর পেয়ে এসিল্যান্ডের অফিসে ছুটে যাই। তিনি আমাদের সামনেই সোলাইমান ফরাজীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও একপর্যায়ে লাঠি নিয়ে এসে আনসার সদস্যকে মারতে বলেন। আনসার তাকে পেটানো শুরু করে এবং তিনি (এসিল্যান্ড) নিজে উঠে এসেও পেটানো শুরু করেন। কেউ ভুল করলে তাকে ভয় দেখানো যায়, জরিমানা করা যায়। কিন্তু একজন কর্মকর্তা এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে মারতে পারে যা কল্পনাও করিনি। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। যাতে পরবর্তীতে কোনো কর্মকর্তা এ ধরণের কর্মকাণ্ড করতে না পারে।“
ভুক্তভোগী সোলাইমান ফরাজী বলেন, “আমি গ্রামের ক্ষুদ্র একজন ব্যবসায়ী। যখন আমাকে জরিমানা করা হয় আমি শুধু বলেছিলাম আমরা গ্রামের দোকানদার তাই আয়কর সার্টিফিকেট রাখি না। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিস কক্ষে নিয়ে কানেধরে উঠবস করান। পরে তার আনসার সদস্য দিয়ে আমার সারা শরীরে লাঠি দিয়ে পেটায়। তিনি নিজেও আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তিনি আমার সঙ্গে অমানুষিক আচরণ করেছেন, আমাকে মেরে জখম করেছেন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন ডামুড্যা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, “ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বিলিং লাইসেন্স আনতে হয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী লাইসেন্সটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। তাকে আইনগতভাবে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তিনজন জামায়াতে নেতার অনুরোধে তাকে ২ হাজার জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
এদিকে তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ ঘটনার তদন্তে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”