• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘নতুন সংবিধানে আগের একটাও মৌলিক অধিকার ফেলে দেবো না’


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম
‘নতুন সংবিধানে আগের একটাও মৌলিক অধিকার ফেলে দেবো না’

লেখক-অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, “মেধা একটি স্বাধীন শক্তি। কেউ মেধা নিয়ে জন্মায়, কেউ আবার মেধা নিয়ে জন্মায় না। এটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। আমরা মেধাকে স্বাধীন শক্তি মনে করি, তবে এটা না–ও হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সপ্তম শ্রেণিতে ক্যাডেট কলেজে যদি আমি ভর্তি হই, তাহলে আমাকে শৃঙ্খলার সঙ্গে যে পড়াশোনা করানো হবে, তাতে আমার পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনাটা বেড়ে যাবে। প্রমাণ হবে আমি মেধাবী বেশি। আবার ক্যাডেট কলেজে সব সময় মেধাবীদের ভর্তি করানো হয়ে থাকে। কিন্তু এর আগে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মেধার বিচার করা হয়। তাই আমি মনে করি, গণতন্ত্রকেও আগে একটি পরীক্ষায় পাস করতে হবে। গণতন্ত্র ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে। ন্যায় মানে যার যার প্রাপ্য তাকে তা দিতে হবে।”

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগারে সাহিত্য আন্দোলন ‘ধাবমান’-এর উদ্যোগে আয়োজিত গণতান্ত্রিক বিপ্লবে জাতীয় সংবিধানের রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন রহমান সিদ্দিক। শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সাধারণ সম্পাদক জোনায়েদ হোসেনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ধাবমান সাহিত্য আন্দোলনের সম্পাদক কাজল কানন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি ধীমান সাহাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, “গত ১৫ বছর মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারে নাই, তা সত্য। আপনাদের কাছে সেটাই মনে হবে দেশের বড় সমস্যা। কিন্তু তার পেছনে অনেক সমস্যা রয়েছে। ভোট দিয়ে অনেক কিছুই হচ্ছে না। অনেক কিছু ভোটের আওতায় বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশে নতুন করে যেভাবে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তা রক্ষা করতে হলে আমাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। তা না হলে যেকোনো মুহূর্তে এটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আমাদের মূল দাবি হবে, সবার জন্য সমান অধিকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।” 

তিনি আরও বলেন, “ধন–সম্পদের ক্ষেত্রে যদি সমতা প্রতিষ্ঠা করা না হয়, তাহলে শুধু ভোটাধিকার দিয়ে তেমন কিছুরই পরিবর্তন ঘটানো যায় না। আমরা সমাজেও তাই দেখতে পাই। বড় লোকেরা শুধু নির্বাচিত হতে পারে। আর গরিবদের কাজ শুধু এই পক্ষকে ভোট দেও, নয়তো অন্য পক্ষকে ভোট দেও। গণতন্ত্রের ধারণাকে যদি ভোটের অধিকার থেকে সরিয়ে আনি তাহলে সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সর্বশেষ যে আন্দোলন হলো সেটাও গণতন্ত্রের একটি উদাহরণ।”

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মধ্যে গড়িমসি ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই যে সংস্কার করতে হবে, আপনি তা আন্দাজও করতে পারছেন না। তাহলে আপনি দেশ চালাবেন কীভাবে? এই সংস্কার করতে হলে আমাদের কী কী করতে হবে, আগে ভোটার তালিকা হোক। তারপর সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য হলে সংবিধান লেখাও সম্ভব। নতুন সংবিধানে আগের সব ফেলে দেবো তা নয়, আমরা একটাও মৌলিক অধিকার ফেলে দেবো না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতার উৎস জনগণ বলে মনে করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, “এই বৈধতা কোনো সাংবিধানিক বৈধতা নয়, জনগণকে চেয়েছে, যিনি ক্ষমতায় ছিলেন তিনি বৈধভাবে নির্বাচিত হননি; সুতরাং তাকে সরিয়ে দেওয়ার অধিকার জনণের আছে।”

সলিমুল্লাহ খান বলেন, “যদি কেউ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে, তাকে উৎখাত করার শক্তি অন্তর্নিহিতভাবে জনগণ সংরক্ষণ করে। তাকে সরিয়ে দিলে দেশে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে। তার বৈধতা আছে, এই বৈধতা যদি সাংবিধানিক না হয়, তাহলে সেই সংবিধানটা বদলানো দরকার।”

সলিমুল্লাহ খান  বলেন, “আমাদের দেশে যারা মনে করছেন, শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের অবসানে এখন আমরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিই, তাহলে আমাদের সংবিধানের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। অথবা পার্লামেন্ট এক কক্ষ আছে, দুই কক্ষ করে দিই, তাতে একটি পরিবর্তন হবে, তবে সেটি মৌলিক পরিবর্তন হবে না। আমরা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা বলছি, এই কথাও বলতে পারতাম না যদি গত ৫ আগস্টের ঘটনা না ঘটত। এটা যে গণতান্ত্রিক একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, জনগণের নিজের থেকে উদ্যোগ আসে, তাদের আশা–আকাঙ্ক্ষা, তাদের দাবিটাই সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তনের মূল শক্তি হয়, এটাই বিপ্লব।”

বক্তব্য শেষে সলিমুল্লাহ খান উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!